কোয়েল পাখি পালন করে নিজের জীবন বদলে ফেলেছেন বগুড়ার জীবন নাহার। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে কোয়েল পাখি পালন শুরু করে তিনি। মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানে বর্তমানে কোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি। জীবন নাহার শুধু নিজের জীবন বদলাননি, কোয়েল পাখি পালনের মাধ্যমে প্রায় আড়াইশ নারীর ভাগ্য বদলে দিয়েছেন তিনি।
বগুড়া শহরতলীর আকাশতারা গ্রামের মজনু রহমানের স্ত্রী জীবন নাহার। কোয়েল পাখির ব্যবসা করেই বানিয়েছেন পাঁচতলা বাড়ি, ১৫ লাখ টাকা খরচ করে বাড়িতে পাখির ডিম ফুটানোর মেশিন স্থাপন করেছেন। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া থেকে শুরু করে সংসার খরচ চালানোর পরেও প্রতি মাসে এখন তার লাভ হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা।
নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট উপজেলার মেয়ে জীবন নাহার। ২০০০ সালে বিয়ে হয় বগুড়া সদরের আকাশতারা গ্রামের মজনু রহমানের সাথে। বিয়ের সময় স্বামী মজনু রহমান ছিলেন বেকার। এ কারণে বিয়ের পর থেকেই ধামুইর হাটে শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামাই থাকতেন মজনু রহমান। ধামুইর হাটে জীবন নাহারের বাবার রড-সিমেন্টের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন জামাই মজনু।
এভাবে শ্বশুরবাড়িতে কেটে যায় ১০ বছর। এরই মধ্যে তাদের সংসারে এক ছেলে এক মেয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোর সময় হলে ২০১০ সালে জীবন নাহারের বাবা সাত হাজার টাকা দিয়ে মেয়ে-জামাইকে পাঠিয়ে দেয় বগুড়ায়। আকাশতারা গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে ফিরে বেকার স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতে শুরু করে তাদের। বাবার দেয়া সাত হাজার টাকা থেকেও সংসারে খরচ হয়ে যায় দুই হাজার টাকা।
জীবন নাহার তার জীবন বদলানোর বর্ণনা করতে গিয়ে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'স্বামীর বাড়িতে ফিরে বেকার স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে হতাশায় ভুগছিলাম। এমন সময় গ্রামের আব্দুল বারী নামের এক ব্যক্তির পরামর্শে কোয়েল পাখি পালন শুরু করি। শুরুতে ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোর ৫ হাজার টাকায় আড়াই হাজার পিস একদিন বয়সী কোয়েল পাখির বাচ্চা কিনি। বাড়িতে পালন করা কোয়েল পাখি একমাস পর বিক্রি করে লাভ হয় ১০ হাজার টাকা।'
তিনি জানান, এরপড় চার হাজার বাচ্চা দিয়ে শুরু করেন কোয়েল পাখি পালন। একমাস পর পাখি বিক্রি করে লাভ হয় ৪০ হাজার টাকা। ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ১০ হাজার টাকা খরচ করে পাখি পালনের জন্য আলাদা একটি টিনের ঘর তৈরি করেন। এরপর তিনি কোয়েল পাখি পালন ব্যবসার প্রসার ঘটানো শুরু করেন।
জানা যায়, জীবন নাহার গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে অন্যান্য নারীদেরকে তার ব্যবসায় লাভের কথা বলে উদ্বুদ্ধ করেন কোয়েল পাখি পালনে। ৯ বছরের ব্যবধানে আকাশতারা গ্রামের প্রায় আড়াইশ নারী এখন বাড়িতে কোয়েল পাখি পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
আকাশতারা গ্রামের আব্দুল আজিজের স্ত্রী হিরা বেগম বার্তা২৪.কমকে জানান, তিনি নিজেই এখন বাড়িতে কোয়েল পাখির খামার গড়ে তুলেছেন। তার খামারে এখন ৪ হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। একদিন বয়সী কোয়েল পাখির বাচ্চা ৬ টাকা পিস দরে কিনে খামারে ২৪ দিন পালন করেন। ১৮-১৯ দিন পার হলেই কোয়েল পাখি বিক্রি শুরু করেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যাপারীরা বাড়ি থেকেই ২২ টাকা থেকে ২৫ টাকা পিস দরে কোয়েল পাখি কিনে নিয়ে যায়।
হিরা বেগম ছাড়াও আকাশ তারা গ্রামে বাড়ি বাড়ি নারীরা গড়ে তুলেছেন কোয়েল পাখির খামার। সংসারে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি কোয়েল পাখি পালন করে নারীরা হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী।
জীবন নাহার আরও জানান, তার খামার থেকে প্রতি মাসে এক লাখ কোয়েল পাখির বাচ্চা বিক্রি করেন। গ্রামের নারীরা তার বাড়ি থেকে এসব বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছেন। ডিম ফুটানোর জন্য বাড়িতে ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে হ্যাচারি করেছেন। তার খামারে তারা স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও ১০ জন কর্মচারী কাজ করে।
কোয়েল পাখির চাহিদা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'কোয়েল পাখি বগুড়াতে ব্যাপক হারে পালন হলেও বগুড়ার বাজারে এই পাখির চাহিদা কম। ঢাকা,চট্টগ্রাম,সিলেট, ফেনী এবং রাজশাহী অঞ্চলে কোয়েল পাখির চাহিদা বেশি। আকাশ তারা ছাড়াও এই অঞ্চল থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ হাজার পাখি বাহিরের জেলা গুলোতে বিক্রি হয়।'