পাবনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের ১৫টি জেলার নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠনের প্রায় ছয় শতাধিক চরমপন্থী সদস্য অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর সরকারিভাবেও তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আগামি ৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) পাবনার শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে চরমপন্থী সংগঠনের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, খুলনা, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, বাগেরহাট ও যশোর জেলার প্রায় ৬০০ চরমপন্থী সদস্য মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ গ্রহণ করবেন। আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থী সদস্যদের আর্থিক প্রণোদনাসহ পুনর্বাসন করা হবে বলে জানা যায়।
পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় এখনও পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি, পূর্ববাংলা লাল পতাকাসহ বিভিন্ন চরমপন্থী সংগঠন তৎপর রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানেও তাদের তৎপরতা পুরোপুরি থামছে না।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ৮ এপ্রিল আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থী সদস্যদেরকে স্ব-স্ব জেলা থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে পাবনায় নিয়ে আসা হবে। এজন্য পাবনায় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫০০ সদস্য মোতায়েন থাকবে।’
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী পাবনার পুলিশ সুপার বলেন, ‘আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচার কাজ চলতে থাকবে। এক সঙ্গে বিপুল সংখ্যক চরমপন্থী সদস্যের আত্মসমর্পণের ফলে এই এলাকায় অপরাধের পরিমাণ কমে আসবে। এছাড়া আত্মসমর্পণ করার পরও তারা নতুন করে অপরাধে জড়াচ্ছে কিনা সে বিষয়ে পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে।’
জানা যায়, ১৯৯৯ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার চার শতাধিক চরমপন্থী সদস্য আত্মসমর্পণ করে ছিলেন। সেই সময় তাদের আনসার বাহিনীতে বিশেষ আনসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়। এবারও চরমপন্থীদের আর্থিক প্রণোদনাসহ পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি সূত্র জানায়, রাজশাহী অঞ্চলের চরমপন্থীদের দমনে ২০০৪ সালের দিকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাভাই, শায়খ আবদুর রহমানের জঙ্গি বাহিনী মাঠে নামে। এরপর এই বাহিনীগুলো একের পর এক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পরবর্তীকালে শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাইয়ের জঙ্গিদল জেএমবি ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে বোমা হামলা চালায়। পরে তাদের দমনে সরকারকে বিশেষ অভিযান চালাতে হয়।
সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সদস্যরা তাদের কৃতকর্মের ভুল স্বীকার করে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে কমে আসবে আতঙ্ক, হতাশা আর আইন শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ।