সাদুল্লাপুরে সবজি চাষিদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে পাতকুয়া

গাইবান্ধা, দেশের খবর

তোফায়েল হোসেন জাকির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গাইবান্ধা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 17:19:51

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা সবজি চাষের জন্য খ্যাত। এ উপজেলার সবজিভাণ্ডার এলাকা ধাপেরহাট। এখানকার কৃষকদের স্বাবলস্বী করতে স্থপন করা হয়েছে পাতকুয়া। সৌরচালিত এই পাতকুয়া থেকে বিনামূল্যে সেচ দিতে পারের কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাতকুয়া খননের মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকায় স্বল্প সেচে ফসল উৎপাদন প্রকল্পটি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করে আসছে। এ পাতকুয়া পদ্ধতির উদ্ভাবক সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধরী। কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নের কথা চিন্তা করে গত বছরের এপ্রিল মাসে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ধাপেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আইয়ুব আলী তৎকালীন কৃষিমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করেন। যার ফলশ্রুতিতে সৌরচালিত পাতকুয়া প্রকল্পটির সুবিধা পাচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার কৃষকরা পাতকুয়ার পানিতে ভুট্টা, লাউ, শিম, রসুন ক্ষেতে সেচ দিয়ে আবাদ করছেন। কয়েকজন কৃষক পাইপের মাধ্যমে তাদের জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এছাড়া পাশে গৃহস্থালি কাজের জন্য কয়েকজন গৃহিণী পানি সংগ্রহ করছেন।

স্থানীয় কৃষক এমাজ আলী, আবেদ আলী ও অফিজ উদ্দিন বলেন, স্থাপিত এই পাতকুয়ার প্রভাব ফেলেছে কৃষকদের মধ্যে। ফলে এবার ফসল উৎপাদন বাড়ছে এবং কৃষিতে আরও সমৃদ্ধি আসছে। পাতকুয়াগুলো থেকে কৃষকরা দিনের বেলা শুষ্ক মৌসুমে বিনামূল্যে পানি নিতে পারছেন।

উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী আলী হোসেন জানান, ধাপেরহাট ইউনিয়নের হিংগারপাড়া ও উত্তরপাড়ায় দু’টি সৌর প্যানেলযুক্ত পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়েছে। পানির অপচয় রোধ করা এবং যেসব এলাকায় পানির সংকট রয়েছে, বিশেষ করে সবজি, রবিশস্য আবাদ করা যায়, সেসব অঞ্চলে সহজেই সেচ সুবিধার জন্য এই পাতকুয়া হয়েছে।

পাতকুয়াগুলো চালানো হচ্ছে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে। ফলে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ নিতে হচ্ছে না। একটি পাতকুয়ার ব্যাস ৫৬ ইঞ্চি ও গভীর ১২২ ফুট। পাতকুয়ার ওপরে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের ছাতা নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তিন হাজার ৬০০ ওয়াট সম্পন্ন সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। সূর্যের আলোয় সৌর প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দিয়ে ৩ হাজার ৫০০ ওয়ার্ড ক্ষমতা সম্পন্ন সাবমারসিবল মোটর পরিচালনা করা হচ্ছে।

এই পানি পাশের ১৮ ফুট উপরে স্থাপিত তিন হাজার লিটার ধারণমতা সম্পন্ন ট্যাঙ্কিতে তোলা হচ্ছে। উত্তোলিত পানি পাইপের মাধ্যমে মাটির নিচ দিয়ে ৫০০ মিটার দূরত্বে সরবরাহ করা হচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন স্থানে সাত পয়েন্টে নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কৃষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পাতকুয়া ব্যবহারকারী কমিটির সভাপতি ও দুইবারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, হিংগারপাড়া, সদরপাড়া ও উত্তরপাড়া কৃষকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে কমিটি পরিচালনা করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান বলেন, সেচের অভাবে অধিকাংশ জমি অনাবাদি থাকতো। কিন্তু সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর পরিকল্পনা অনুযায়ী অত্যাধুনিক পাতকুয়া নির্মাণের ফলে কৃষকরা সহজে রবিশস্যসহ সবজি চাষাবাদ করতে পারছেন। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে কৃষকরা তাদের অনাবাদি জমি সেচের আওতায় এবং আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে পারছেন। এ বিষয়ে কৃষদের গ্রুপভিত্তিক সেচ ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর