যেখানে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার সিংহভাগ শ্রমিকের বাস, সেই এলাকা ভাদাইলের শ্রমিকরা দিনাতিপাত করছেন চরম দুর্ভোগে। পানিবন্দী হয়ে আছেন প্রায় এক মাস ধরে। বয়স্ক, শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগে। আর বর্তমানে পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছেন হাজারও পোশাক শ্রমিক।
প্রায় তিনশ পরিবারের কষ্ট দেখার যেন নেই কেউ। পানি নিষ্কাষণের যতটুকু ব্যবস্থা ছিল তা বন্ধ করে দিয়েছে ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষ। তিনশটি পরিবারের শিশুসহ প্রায় দুই হাজারেরও বেশি শ্রমিকের বাস এই শ্রমিক কলোনিতে। এমন অবস্থায় অনেক শ্রমিক ভাড়া বাসা ছেড়ে বেশি ভাড়ায় উঠেছেন অন্যত্র। কম বেতন পাওয়া শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে সেখানেই থাকছেন।
রোবরার (৭ এপ্রিল) সরেজমিনে এলাকাটিতে ঘুরে দেখা যায়, সাভারের ডিইপিজেডের ভাদাইল এলাকার শ্রমিক কলোনিতে পানি নিস্কাষনের ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ায় বর্তমানে বাড়ির উঠান ও ঘরের ভেতরে ময়লাপানি জমে বসবাসের অযোগ্য অবস্থা। ঘরবাড়ি ও রান্নাঘরে ময়লা পানি উঠায় কিছু কিছু পরিবারের রান্না বন্ধ হয়ে গেছে। বাচ্চাদের দোকান থেকে খাবার কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। কখনো ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি সেচ দিয়ে শুকিয়ে নিয়ে তারপর রান্না করছেন শ্রমিকরা।
জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
ওই এলাকার বাড়ির মালিক মোঃ হারুন মিয়া জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে ডিইপিজেডের ড্রেইন দিয়ে পানি নিস্কাষন হচ্ছিল কিন্তু কিছু না জানিয়ে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় প্রায় এক মাস ধরে তারা পানিবন্দি হয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’
বাড়ির ভাড়াটিয়া রহিমা বলেন, ‘সারাদিন উঠানের পানি বালতি দিয়ে সেচ দিতে হয়। ছোট বাচ্চারা শুধু বমি করতাছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা অসুস্থ হইয়া মইরা যামু।’
এখানে বসবাস করা গৃহবধু খাদিজা বলেন, ‘ময়লাবদ্ধ পানিতে জন্ম নেওয়া মশার বিস্তার এতো বেশি যে ঘরে বা বাহিরে বসে থাকাও যায় না। এডিস ও ডেঙ্গু মশা আতঙ্কে আছি আমরা। স্থানীয় সরকার অথবা জনপ্রতিনিধিরা ব্যবস্থা না নিলে আমাদের ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে।’
ডিইপিজেডের পোশাক কারখানায় কর্মরত এক শ্রমিক রবিউল বার্তা২৪কে বলেন, ‘আমি এই বাসায় ৫ বছর ধরে ভাড়া থাকি। আগে কোন সমস্যা ছিল না আমাদের, তবে গত এক মাস ধরে আমরা খুব ভোগান্তিতে আছি। এখানকার পানি ডিইপিজেডের ড্রেনে নামতো কিন্ত তা তারা বন্ধ করেছে। তিনি বলেন, আমরা তো ডিইপিজেডে চাকরি করি। আমরা যদি সুস্থভাবে না থাকতে পারি তাহলে আমরা চাকরি করব কিভাবে। আমরা এ সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান চাই।’
এ ব্যাপারে আশুলিয়ার স্বনির্ভর ধামসোনা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪কে বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট চেষ্টা চলছে। এরইমধ্যে ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।’