ফেনীতে মাদরাসা ছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, খোদ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার দিকে। এ ঘটনায় শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে ওই ছাত্রীর। বর্তমানে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে আছেন নুসরাত জাহান।
তবে অভিযোগ ওঠা আলোচিত এই শিক্ষকের অপকর্মের তালিকা বেশ লম্বা বলছেন, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
সর্বশেষ ২৭ মার্চ আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানকে আগাম প্রশ্নপত্র দেওয়ার কথা বলে অনৈতিক প্রস্তাব দেন শিক্ষক সিরাজ। পরে মেয়ের শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন মা। বর্তমানে সেই মামলায় শিক্ষক কারাগারে আছেন। তবে থেমে নেয় তার অনুসারীরা।
সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'এর আগেও ওই অধ্যক্ষের নানা কুকর্মের অভিযোগ আছে। তার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি, প্রতারণা, নাশকতা ও যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ফেনী ও সোনাগাজী থানায় ৪টি মামলা রয়েছে। ২০১৭ সালে চেক জালিয়াতির মামলায় জেলও খেটেছিলেন তিনি।'
ওসি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, 'আমি এখানে যোগদান করার পর থেকে থানা একাধিক ছাত্রী তার বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে এক শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।'
এদিকে আলোচিত এই শিক্ষক জামায়াত নেতা ছিলেন। বিভিন্ন অভিযোগের কারণে ২০১৬ সালে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী জেলা জামায়াতের আমির এ কে এম শামসুদ্দিন।
শামসুদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'এক সময় সিরাজ জামায়াতের শুরা সদস্য ছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ একাধিক অভিযোগ ওঠার পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।'
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'যতটুকু জেনেছি ১৮ বছর ধরে এই মাদরাসায় আছেন সিরাজ। এর আগেও একাধিকবার তার বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল। প্রায় প্রতিবারই প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। অপকর্ম আড়াল করতে তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। মাদরাসা ঘিরে জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেওয়ারও অভিযোগ আছে।'
শিক্ষক সিরাজের অপকর্ম সম্পর্কে জানতে চাইলে, ফেনী জেলার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'অধ্যক্ষ সিরাজের অতীত সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। তার অতীত মোটেও ভাল না। সব কিছু মাথায় রেখে আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। তাছাড়া বিষয়টি আমাদের পুলিশের উচ্চ মহল থেকেও ভালভাবে দেখার নির্দেশনা এসেছে।'
উল্লেখ্য, শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান ওই ছাত্রী। মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে রাফি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান।
সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচ জন ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাকে ফেনী থেকে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।