১৬০টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান

বরগুনা, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বরগুনা, বার্তা২৪.কম:  | 2023-08-29 01:25:50

বরগুনার ১৬০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, ভবন নির্মাণে অনিয়ম হওয়ায় ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে ভবনগুলো। আর এ কারণে বারবার দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তবে এ ব্যাপারে শিক্ষা অফিস দায় চাপাচ্ছে এলজিইডির উপর। তবে এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি নয় এলজিইডি।

বরগুনার তালতলীর ছোটবগী পিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি ২০০২ সালে নির্মাণ করেন তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা মতিয়ার রহমানের ভাগ্নে আব্দুল্লাহ আল মামুন। ২০০৪ সালে ভবনটি হস্তান্তর করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে নির্মাণের এক বছর মধ্যেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে শিক্ষা অফিসকে জানালেও তারা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা না করে এখানেই পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় শিক্ষা অফিস।

ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জাকির হোসেন চুন্নু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘২০০২ সালে ক্ষমতাসীন দল বিএনপির বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমানের ভাগ্নে সেতু এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন টেন্ডার নিয়ে নিম্ন মানের কাঁচামাল দিয়ে ভবনটি নির্মাণ করেন। সে সময় তারা বাধা দিলেও তখন তার ক্ষমতার দাপটে কাজ বন্ধ করতে পারেনি তারা। আর এ কারণেই আজ তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মানসুরা বিদ্যালয়ে শিক্ষা অর্জন করতে এসে জীবন হারিয়েছে।’

একই অবস্থা তালতলীর মেনিপাড়া, তাতীপাড়া ও উত্তর কড়াইবাড়িয়া, বরগুনা সদরের চরকলোনী, মধ্য বরগুনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বরগুনার প্রায় ১৬০ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের। পিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুর্ঘটনার পর আতঙ্ক বিরাজ করছে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বেশিরভাগ ভবন নির্মাণ হয়েছে ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে। তবে প্রভাবশালী ঠিকাদাররা নিম্নমানের মালামাল দিয়ে ভবন নির্মাণ করায় এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে এসব ভবন। তবে এসব বিষয়ে শিক্ষা অফিসকে জানালেও তারা ভবন নির্মাণের এক বছরের মাথায় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করতে রাজি হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে এখানেই পাঠদান চালাচ্ছেন তারা।

তালতলীর মেনিপাড়া, উত্তর কড়াইবাড়িয়া ও মধ্য বরগুনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শশী, নাদিরা, সিফাত, তন্নী, খাইরুল, আতিক, মিতা, রাফিসহ একাধিক শিক্ষার্থী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নতুন ভবন না হলে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তারা আর ক্লাশ করবেন না।’

তবে এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এম মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমের কাছে অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে দায় চাপালেন এলজিইডির উপর।

তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন হস্তান্তর করার পর তারা ভবন রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তবে নির্মাণে কেমন ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করলো বা নিম্ন মানের ভবন নির্মাণ হয়েছে কিনা এমনটা দেখার দায়িত্ব এলজিইডির। কারণ তাদের ইঞ্জিনিয়ার নেই।’

তবে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি।

তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিদর্শন করেন দুদকের একটি দল। এসময় দুদকের পটুয়াখালী আঞ্চলিক অফিসের সহকারী পরিচালক মোজাম্মেল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নড়ভড়ে এসব ভবন নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উল্লেখ্য, শনিবার তালতলীর ছোটবগী পিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের বীম ধ্বসে নিহত হয় মানসুরা নামে তৃতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী। এর ঠিক দুইদিন পর মঙ্গলবার ফের বরগুনা সদরের আমতলারপাড়ের মধ্য বরগুনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বীম ধসে পড়ে। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর