ভোলার মনপুরা উপজেলার চর নিজাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনে চলছে পুলিশ ক্যাম্প আর পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় প্রশাসন বলেছে, অস্থায়ীভাবে এই ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ৪ মাস অতিবাহিত হলেও ক্যাম্প স্থানান্তরের কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা ছোট্ট এক জনপদ চরনিজাম। এখানকার শিশুদের লেখা-পড়ার জন্য ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। চর নিজামের একমাত্র বিদ্যালয়টিতে ২৪৬ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। পুরনো ভবনে লেখা-পড়া বিঘ্নিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে গত বছর এখানে চার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আধুনিক ৩ তলা পাকা ভবন নির্মাণ করে।
কিন্তু ভবনটি নির্মিত হলেও শিক্ষার্থীরা নতুন ভবনে ক্লাস করার সুযোগ পাচ্ছে না। নির্মাণের পর পরই গত ১৫ ডিসেম্বর ভবনটিতে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। পুলিশের জন্য ব্যবহৃত আগের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পুলিশদেরকে এই ভবন ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ভবনে কিভাবে ক্লাস করছে শিশুরা তা নিয়ে ভাবছে না কেউ।
নতুন ভবনে আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে ক্লাস শুরুর মাত্র ৩ দিনের মাথায় শিক্ষার্থীদেরকে আবার সেই পুরনো ভবনে ক্লাস করতে বাধ্য করায় হতাশ হয়ে পড়ে ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবকরা।
পুরনো ভবনের ছাদে রয়েছে ফাটল, পিলারগুলো খসে পড়ে দুর্বল হয়ে গেছে। যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। শিক্ষার্থী মাফুজ জানায়, আমাদের নতুন স্কুলে পড়তে ভালো লেগেছে, এখন পুরনো স্কুলে পড়ি, কেমন জানি ভয় লাগে, ভালো লাগে না।
শিক্ষার্থী রাবেয়া জানায়, আমাদের এই স্কুলে পড়তে ভয় করে, দালানটা ভাইঙ্গা আমাদের মাথার উপরে পড়বে।
প্রধান শিক্ষক মো: রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা অলরেডি নতুন ভবনে উইঠা গেছিলাম, পরে ইউএনও মহোদয়, ওসি মহোদয় আইসা রিকোয়েস্ট করার পর আমরা পুরাতন ভবনে চলে গেছি। ওইখানে (নতুন ভবন) পুলিশ সিফট করছে।
সহকারি শিক্ষকরা বলেন, ‘আমরা পুরাতন ভবনে বাচ্চাদেরকে নিয়ে ক্লাস করছি, পুরাতন ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে এবং নিচের পিলারগুলো ভাঙন ধরেছে, তাতে বাচ্চাদেরকে নিয়ে ক্লাস করতে আমাদের ভয় লাগে। আড়াইশো ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে পুরাতন ভবনে ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অভিভাবক আলম ফরাজি বলেন, ‘আমার ছেলে-মেয়ে এই স্কুলে পড়ে। এই জায়গায় অন্য কোন স্কুল নাই, এই স্কুলে পড়াতে হয়। বাসায় আমরা সব সময় টেনশন করি, ছেলেমেয়েরা কি অবস্থায় আছে না আছে।’
বিদ্যালয়টিতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপিত হওয়ায় স্বস্তিতে নেই পুলিশরাও। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে বিদ্যালয়ে আসলেও এখনো তাদের অস্ত্র রাখার ঝুঁকি রয়েই গেছে।
চর নিজাম পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ হারুন-অর-রশিদ জানিয়েছেন, পূর্বের বিল্ডিংটা ঝুঁকিপূর্ণ থাকাতে বর্তমানে আমরা সেখান থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এখানে বসবাস করছি। এই বিল্ডিংটাও আমরা ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছিনা। কারণ হাতিয়ারগুলোর নিরাপত্তা নেই এখানে এবং পাশে আরেকটা প্রতিষ্ঠান চলে। সেখানে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে, ওই লেখাপড়ায় ডিস্টার্ব হয় আমাদেরও চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটে।
মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বশির আহাম্মদ জানিয়েছেন, চরনিজামের মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে ক্যাম্পটি বিদ্যালয়ের নতুন ভবনে স্থাপন করা হয়েছে। তবে বাচ্চাদের পড়ালেখার স্বার্থে আমরা খুব শীঘ্রই পুলিশ ক্যাম্পটি অন্নত্র সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করব।
১৫ বছর আগে চর নিজামে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয় পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা কিন্তু ক্যাম্পটি স্থায়ী না হওয়ায় এতদিনেও পুলিশের জন্য স্থায়ী ভবন নির্মিত হয়নি।