ফেনীর সোনাগাজী থেকে: নুসরাতের শোকে ফেনীর সোনাগাজী আজ স্তব্ধ। তার পোড়া লাশের অপেক্ষায় চোখের কোনে জল নিয়ে হাজারো গ্রামবাসী ও আত্মীয়-স্বজন।
সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। শুরু থেকে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার কু-দৃষ্টি তার ওপর। নানা অজুহাতে পিয়ন দিয়ে তাকে ডেকে মুখে পর্দা সরাতে বলত; তোমাকে আমার ভালো লাগে এসব জানাত।
নুসরাত পর্দা করত, ধর্মের উপর অগাধ বিশ্বাস, সেই সঙ্গে প্রতিবাদীও। অধ্যক্ষের কু প্রবৃত্তি কোনোভাবে প্রশ্রয় পেত না।
সর্বশেষ (২৭ মার্চ) পিয়ন নুরে আলমকে দিয়ে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ নুসরাতের শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করে। প্রতিবাদী, অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়া নুসরাত পরিবারকে জানায়।
পরিবারের সমর্থনে এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেখানে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (প্রত্যাহার) মোয়াজ্জেম হোসেনকে এসব ঘটনার বর্ণনা দেন নুসরাত।
ওইদিনের সেই ঘটনা বার্তা২৪.কম-কে তুলে ধরে সোনাগাজী থানা পুলিশ। এ বিষয়ে একটি ভিডিও চিত্রও বার্তা২৪.কম-এর হাতে আসে।
অভিযোগ করতে গিয়ে নুসরাত ওসি মোয়াজ্জেমকে (প্রত্যাহার) জানিয়েছেন, প্রথম বর্ষ থেকেই অধ্যক্ষ সিরাজ তাকে রুমে ডাকত। জোর করে তার মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে নিত। অধ্যক্ষ সিরাজ বলতো, 'তোকে আমার খুব ভালো লাগে। মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে ফেল, তোকে দেখতে দে'।
এসব ঘটনায় পরিবারকে জানিয়েছিলেন নুসরাত। পরিবার থেকে এই বিষয়ে বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে গেলে অধ্যক্ষ সে বিষয়গুলো অস্বীকার করেন।
কিন্তু অধ্যক্ষের লালসার চূড়ান্ত নমুনা দেখা ২৭ মার্চ।
সেদিন পিয়ন নূরে আলমকে দিয়ে নুসরাতকে তার কক্ষে ডাকে। পিয়নকে বের করে দিয়ে, জোর করে বুকে হাত দেন। আমি কান্নায় ভেঙে পড়লে। স্যার আমাকে রুম থেকে বের করে দেয়- তার পুলিশকে দেওয়া অভিযোগে বের হয়ে আসে এসব তথ্য।
নুসরাত মাদরাসার অধ্যক্ষ (বরখাস্ত) সিরাজের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে সেদিনই তার মাকে নিয়ে থানায় মামলা করেছিলেন। মামলার পর পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেফতার করে। এতে তার অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়।
পরে ঘটনার দিন আগের রাতে মাদরাসায় বৈঠক করে অধ্যক্ষ সিরাজের সহযোগীরা। তার ধারাবাহিকতার (৬ এপ্রিল) শনিবার এই বর্বরতার শিকার হয় নুসরাত।
এখন আগুনে পোড়া লাশ হয়ে তার জন্মস্থান ফেনীর সোনাগাজীতে ফিরছে নুসরাত।