ডাক্তার নেই জেনেও হাসপাতালে আসে রোগী

মেহেরপুর, দেশের খবর

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মেহেরপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 15:08:18

অ্যাজমা ও বুকে ব্যথার অসুখ নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন বয়োবৃদ্ধ নজরুল ইসলাম। তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু এর কোনটিই নেই মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

এ কারণে মেডিকেল অফিসারদের চিকিৎসায় নজরুলকে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। যা অনেকটাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতোই। কিন্তু জীবন-মৃত্যুর এই খেলায় নজরুল ইসলাম একজন পরাজিত সৈনিক। কেননা বাইরের হাসপাতালে গিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য নেই তার।

এভাবেই নজরুলের চিকিৎসার বর্ণনা দিলেন তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুন।

জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার অর্ধেক মানুষের বসবাস গাংনী উপজেলায়। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র অবলম্বন ৫০ শয্যা বিশিষ্ট গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালটি।

এ হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার জন্য উপযুক্ত ভবন ছাড়া আর তেমন কোনো সেবা দেওয়ার সামর্থ নেই। নেই আধুনিক এক্সরে মেশিন। জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অপারেশন থিয়েটার বন্ধ কবে থেকে তার হিসাব নেই। বিশেষ করে ডাক্তার না থাকায় রোগীদের বিড়ম্বনার শেষ নেই।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. বুদ্ধদিপ্ত দাস জানান, এখানে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা, ১০ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ৬ জন মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ৪ জন মেডিকেল অফিসার ছাড়া বাকি পদগুলোতে কোনো ডাক্তার নেই। বিশেষ করে ১০টি পদের বিপরীতে একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (বিশেষজ্ঞ ডাক্তার) কাজ করছে। বর্তমানে যে কয়জন মেডিকেল অফিসার আছে, তারা
কোনো মতে চালিয়ে নিচ্ছেন।

এদিকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কাটাছেঁড়া ও আঘাতপ্রাপ্ত এবং তাৎক্ষণিক অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার কথা। কিন্তু রোগীদের এতো ভিড় থাকে যে কোনটি জরুরি আর কোনটি কম জরুরি তা হিসাব করার সময় থাকে না ডাক্তারদের। সব সময়ই রোগীর চাপ থাকে এখানে। ডাক্তার নেই জেনেও এখানে চিকিৎসা নিতে আসে তারা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, এক্সরে মেশিন নেই দীর্ঘদিন থেকে। জেলা সদর থেকে একটি পুরনো মডেলের এক্সরে মেশিন আনা হলেও তা দিয়ে কাজ হয় না। ডিজিটাল এক্সরেতে চিকিৎসক ও রোগীরা বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। তাই হাসপাতালে এখন আর কেউ এক্সরে করায় না।

দীর্ঘদিন ধরেই প্যাথলজি বিভাগ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এখানে তিনটি পদ থাকলেও আছে মাত্র একজন। তাই গরিব রোগীদের জন্য কম টাকায় প্রাপ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালে পরীক্ষা করাচ্ছে রোগীরা।

জানা গেছে, একজন গাইনি কনসালটেন্ট ও অ্যানেসথেসিয়া ছাড়া অপারেশন কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। তাইতো দীর্ঘদিন ধরে এ হাসপাতালের এক্সরে কক্ষটি তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। গর্ভবতী কোনো মা হাসপাতালে এলে ক্লিনিকে কিংবা মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন কর্মরতরা। এতে রোগীদের চিকিৎসা খরচ বাড়ছে কয়েকগুণ।

এ প্রসঙ্গে মেহেরপুর সিভিল সার্জন শামীম আরা নাজনীন জানান, খুব শিগগিরই চিকিৎসকদের পদগুলো পূরণ করা হবে। পাশাপাশি অকেজো হয়ে পড়া যন্ত্রপাতি মেরামত করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর