গম চাষে লোকসান, ঠাকুরগাঁওয়ে কমছে আবাদ

ঠাকুরগাঁও, দেশের খবর

নাহিদ রেজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪ ঠাকুরগাঁও | 2023-09-01 09:55:30

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিবছরই কমছে গমের আবাদ। গম উৎপাদনের জেলা হিসেবে সারাদেশে খ্যাতি থাকলেও এখন এ জেলায় কমেছে গমের আবাদ।

কৃষকরা বলছেন, প্রতিবছর লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। এতে গম ছেড়ে অন্য ফসলের দিকে ঝুকছেন কৃষক। গম চাষ বাড়াতে দাম বাড়ানোসহ সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে গম কিনতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি তুলনামুলক উচুঁ। হিমালয়ের পাদদেশের জেলা হওয়ায় এখানকার মাটি গম চাষের উপযোগী। প্রতিবছরই গমের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে এ জেলায়।

গম উৎপাদনের দিক দিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা দেশে প্রথম স্থান অধিকার করে আছে। সারাদেশে যে পরিমাণ গম উৎপাদন হয় তার ৫ ভাগের একভাগ গম উৎপাদন হয় এ জেলায়।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে গমচাষীরা নায্যমূল্য না পাওয়ায় এবং সরকারি খাদ্যগুদামে সরাসরি গম বিক্রি করতে না পারায় লোকসান গুণছেন। এতে গম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা। 

কৃষকদের অভিযোগ, সরকার নিজেকে কৃষিবান্ধব বলে দাবি করলেও তারা উৎপাদিত ফসলের নায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সরকার লোকসান পুষিয়ে দিতে সরকারি খাদ্যগুদামে গম সংগ্রহ কার্যক্রম চালু করলেও কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া হয় না।

তারা বলেন, সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা গমের স্লিপ বিক্রি করেন। তাদের কাছ স্লিপ কিনে গোডাউনে গম বিক্রি করে তাদের লাভ হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কৃষকদের কম দামে গম বিক্রি করতে হচ্ছে। এ কারণে গম চাষে তাদের লাভ হচ্ছে না।

নারায়ণ চন্দ্র নামের এক কৃষক জানান, সার, বীজ, শ্রমিকের মজুরিও আগের চেয়ে অনেক বেশি। সেই  তুলনায় অনুপাতে গমের দাম বাড়েনি। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে লাভ হচ্ছে না কৃষকদের।

একই মত দিলেন দিনেশ পাল নামের আরেক কৃষক। তিনি জানান, বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ গম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় প্রতিমণ। ফলে অনেক কৃষক গমের উৎপাদন খরচ তুলতে পারছে না। প্রতিমণ গম ১২শ টাকায় বিক্রি করা গেলে গম আবাদ করে খরচ উঠানো সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, এক বিঘা জমিতে গম চাষ করতে ১২-১৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়। সে তুলনায় খরচই উঠছে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবারে জেলায় ৬২ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু অর্জিত হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে। আর গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৮০ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন।

গত বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬১ হাজার জমিতে গমের আবাদ হয় এবং গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ লাখ ১১ হাজার ৭৪৬ মেট্রিক টন।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বার্তা২৪কে জানান, বিগত কয়েক বছরের ন্যায় এ বছরও গমের উৎপাদন ভাল হয়েছে। কৃষকরা গম উৎপাদন করে যদি মাড়াই করে বাড়িতে কিছুদিন মজুদ করে রাখে এবং পরবর্তীতে বিক্রি করে তাহলে গম বিক্রি করে ভাল লাভবান হতে পারবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর