বাঙালির উৎসবের দিনে আশুগঞ্জে বিষাদের সুর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দেশের খবর

আল মামুন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 21:11:35

বাংলা ভাষাভাষীদের আনন্দের দিন (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ। কিন্তু ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক বাহিনী আশুগঞ্জের শতাধিক নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। পহেলা বৈশাখ বরণে বাঙালি জাতির জন্য দিনটি আনন্দের। তবে এই দিনটি আশুগঞ্জবাসীর জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। প্রতিবছর এই দিনটিকে আশুগঞ্জবাসী বেদনার দিন হিসেবেই পালন করে।

স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে এমন বেশির ভাগ স্থানেই এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি স্মৃতিচিহ্ন। আর এই এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি- অচিরেই আশুগঞ্জে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হোক।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল ভোরে পাক বাহিনী আধুনিক সমরাস্ত্রে সু-সজ্জিত হয়ে আশুগঞ্জের খাদ্য শস্য সাইলোতে ইস্টার্ন জোনের হেড কোয়ার্টার স্থাপনের লক্ষ্যে হেলিকপ্টারে করে প্রায় ৫ হাজার সৈনিক অবতরণ করে। এখান থেকে পাকবাহিনী ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের অপারেশন পরিচালনা করেন।

১৪ এপ্রিল পাক সেনারা আশুগঞ্জের সোহাগপুরে হেলিকপ্টার যোগে অবতরণ করে। হেলিকপ্টার থেকে নেমে প্রথমে তারা আশুগঞ্জ বাজারে আসার পথে সোহাগপুরে হামলা চালায়। পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করে বেঙ্গল রেজিমেন্টের দুটি ব্যাটালিয়ন। কিন্তু তাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে পিছু হটে ভারতীয় সীমান্তে ও হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়ায় চলে যায় বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যরা।

পরবর্তীতে পাক বাহিনীর সদস্যরা দুপুরের মধ্যেই আশুগঞ্জ বন্দর দখল করে সোনারামপুর, ধানের আড়ত, মাছ বাজার, রেল গেট, রেল স্টেশন, বড়তল্লা, খোলাপাড়া, লালপুর, চরচারতলা গ্রামের নিরীহ লোকজনকে আটক করে নিয়ে আসে। পরে সাইলোর কাছে মেঘনা নদীর উপর নির্মিত রেল সেতু, ধানের আড়তের মাঠ, মাছ বাজার, রেল স্টেশনসহ আশুগঞ্জের ৫টি স্পটে ব্রাশফায়ার করে তাদের হত্যা করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাসিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সেসব স্মৃতি মনে হলে এখনো গা শিউরে ওঠে। স্বাধীনতার এতো বছর পরেও এখানে শহীদের স্মরণে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠেনি। জানি না মৃত্যুর আগে স্মৃতিস্তম্ভের দৃশ্য দেখে যেতে পারব কিনা। এ ব্যাপারে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে বারবার ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হলেও স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠেনি।’

আগামী প্রজন্মকে এ ইতিহাস জানানোর জন্য ছোট পরিসরে হলেও সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে ওই সব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. ইকবাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এইদিনটিকে কেন্দ্র করে আসলে কোনো কিছুই করা হয় না। তবে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমাদের আশুগঞ্জে প্রায় ৭০-৮০ জন পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছেন। আমরা চাই এইদিনটিকে স্বীকৃতি দেয়া হোক। পাশাপাশি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর