পূর্ব আকাশে সূর্য উদয় হয়ে ধীরে ধীরে যেতে থাকে পশ্চিমে। একসময় সূর্য অস্ত গিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে পড়ে। এটিই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু পশ্চিম আকাশের শেষ প্রান্তে যখন সূর্য পৌঁছায় তখন গরু নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যায় গ্রামের গৃহস্থদের। এটিও যেন তাদের জন্য একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। সকালে মাঠে-ঘাটে গরু বেঁধে রেখে যায়, আর বেলা শেষে এসে বাড়ি নিয়ে যায়।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ মুহূর্তে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ শাকচর গ্রামে একে একে দুইজন বৃদ্ধ ও একজন যুবককে গরু নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। মাহমুদ উল্যাহ, সফিকুল ইসলাম ও রাশেদ হোসেন তাদের পালিত গরুগুলো প্রতিদিন সকালে মাঠে এনে বেঁধে যান। আবার বেলা শেষে এসে বাড়ি নিয়ে যায়।
গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা। ফসলের ক্ষেত আর দু’পাশে গাছের সারি ও মাঝে মেঠো পথ প্রকৃতির এক অসাধারণ সন্নিবেশ। এর মাঝ দিয়ে যখন গরু নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন গৃহস্থরা, এটি প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে পশ্চিম আকাশের সূর্যের আলো যখন চোখে পড়ে, তখন মনে হয় কোন এক অদ্ভুত আলোকরশ্মি উঁকি মারে। আর এসব দেখতে শহর থেকে ছুটে যেতে মন চায় গ্রামীণ পরিবেশে। যেখানে বিশুদ্ধ বাতাস গায়ে লাগিয়ে মনের সকল গ্লানি নিমেষে মুছে ফেলা যায়।
গরু নিয়ে যাওয়ার পথে জানতে চাইলে মাহমুদ উল্যাহ জানান, তার বাবার নাম তাজুল হক। তাদের বাড়ি ছিল জেলার কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামে। সেখান থেকে উঠে এসে তিনি দক্ষিণ শাকচর বাড়ি করেন। গত ২৮ বছর ধরে তিনি দক্ষিণ শাকচর গ্রামে বসবাস করছেন। তার সংসারে স্ত্রী, ২ ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। কিন্তু কেউই বেশি দূর পড়ালেখা করেনি।
জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ শাকচর গ্রামের চাষাবাদ করে তার সংসার চলে। এবার তিনি ২৫ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধানও ভালো হয়েছে। এখন শুধু ধান পাকার অপেক্ষায় আছেন তিনি। বছরের বিভিন্ন মৌসুমে তিনি নানা ফসলের চাষাবাদ করেন। আর পরিবারের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে তিনি গরু লালন পালন করেন। গরুর দুধ বাড়িতেই খাওয়া হয়। কিছু পরিমাণ দুধ বাইরেও বিক্রি করেন তিনি।