বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনায় দুই হাত হারানো স্বর্ণা রাণী সরকার লেখাপড়ার প্রতি অদম্য। পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হতে চান তিনি। তবে দুর্ঘটনায় দুই হাত হারালেও হারাননি মনোবল। মায়ের উৎসাহে কনুই দিয়ে লিখেই উত্তীর্ণ হয়েছেন পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায়। এবার ঈশ্বরগঞ্জের ইসলামিয়া টেকনিক্যাল বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের চড়পাড়া গ্রামে বাড়ি হলেও স্বর্ণা রাণী সরকারের পরিবার থাকে গাজীপুরে। বাবা দুলাল চন্দ্র সরকার পেশায় কৃষক। মা স্বপ্না রাণী সরকার গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে স্বর্ণা ছোট। প্রায় ১০ বছর আগে একদিন চারতলা বাসার ছাদে খালাতো বোনের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন স্বর্ণা। হঠাৎ পা পিছলে নিচে পড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। আত্মরক্ষায় ছাদের কার্নিশ ঘেঁষা বিদ্যুতের তার দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেন। তখন বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার দু’হাত পুড়ে যায়। জীবন বাঁচাতে ডাক্তারদের পরামর্শে পরবর্তীতে দুই হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়।
গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষা শেষে স্বর্ণা রাণী সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সুস্থ হওয়ার পর স্কুলে যাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু মা সাহস করে আমার কনুইয়ে কলম ধরিয়ে দেন। এরপর ফের স্কুলে যেতে শুরু করলাম। প্রথম দিকে লিখতে সমস্যা হলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে লেখা আয়ত্ত করে ফেলি। এরপর কনুইয়ে লিখে পিইসি, জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছি। এবার এইচএসসি পরীক্ষাও দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা একজন দরিদ্র মানুষ। ছোট থেকে অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে বড় হয়েছি। অর্থাভাবে আমার বড় বোনের পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে দিতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনায় হাত হারানোর পর মা আমাকে বলতেন তোকে পড়াশোনা করতে হবে। নইলে জীবনে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে। যত কষ্টই হোক আমি তোকে পড়াশোনা করাব। মায়ের অনুপ্রেরণাতেই আবার পড়াশোনা শুরু করি। এরপর নানা প্রতিকূলতার মধ্যে টিউশনি করে নিজের খরচ বহন করেছি।’
জানা গেছে, স্বর্ণা রাণী সরকার ২০১০ সালে চড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসিতে জিপিএ ৩.২৫, ২০১৩ সালে গাজীপুরের হরিনাল হাইস্কুল থেকে জেএসসিতে জিপিএ ৪.৬০ এবং ২০১৬ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৩.৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
স্বর্ণা রাণী সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হতে চাই। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে অনার্সে ভর্তি হতে অনেক খরচ হবে। এতো খরচ আমার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব হবে না। তাই সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতো।’
স্বর্ণার মা স্বপ্না রাণী সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সব সময় প্রার্থনা করি, স্বর্ণার স্বপ্ন যেন পূরণ হয়। তবে টাকার অভাবে তার স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে সেটা নিয়েও ভয় হয়।’