ভুয়া ডিগ্রির বড় ডাক্তার ‘নুর নাহার’

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার, বার্তা ২৪.কম | 2023-09-01 19:14:24

চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করেই হয়ে গেছেন চিকিৎসক। প্রাতিষ্ঠানিক বিডিএস ডিগ্রি নেই। চেম্বার সাজিয়ে নিজেই শুরু করেন অবৈধ চিকিৎসা ব্যবসা। রোগী দেখতে নিয়ে থাকেন চড়া ফি। বিভিন্ন রোগের জটিল অপারেশনেও করছেন তিনি। কক্সবাজার শহরের এই ভুয়া চিকিৎসক নুর নাহার চৌধুরী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের বাজারঘাটা এলাকায় অবৈধভাবে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন এই ভুয়া চিকিৎসক। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসা রোগীদের ফাঁদে ফেলে দালাল চক্র নিয়ে আসে নুর নাহারের চেম্বারে। এরপর চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। নুর নাহারের রয়েছে আট জনের একটি দালাল সিন্ডিকেট। যারা কক্সবাজার সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফাঁদে ফেলে এখানে আনেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ‘হাজী ওলা মিয়া ভবন’ নামে একটি ভবনে চেম্বার খুলেছেন ভুয়া চিকিৎসক নুর নাহার। সেখানে রয়েছে একটি বেড। যেখানে রোগীর চিকিৎসা করা হয় সরু একটি কক্ষে।

ভুয়া ডাক্তার নুর নাহার চৌধুরী

 

প্রথমে সেখানে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দিলেও পরে সমঝোতার চেষ্টা করেন নুর নাহার। তিনি নিজেকে চিকিৎসক দাবি করলেও চিকিৎসক হিসেবে তার কোনো সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। নাম সর্বস্ব একটি ট্রেনিং নিয়েছেন চিকিৎসার উপর। তার একটি সার্টিফিকেট রয়েছে তার কাছে। এটির ভিত্তিতেই তিনি নিজেকে চিকৎসক পরিচয় দিচ্ছেন।

এদিকে, গত ৯ মার্চ টিউমার যন্ত্রণা নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসেন ঈদগাঁওয়ের নতুন অফিস এলাকার সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী মিনু আরা বেগম (২৮)। অপারেশনের কথা বলে দালালরা ফাঁদে ফেলে নুর নাহারের কাছে নিয়ে আসেন। অপারেশনের নামে পেট কেটে চিকিৎসা করেন নুর নাহার। তারপর মিনু আরাকে বলেন ১৫ দিন পর্যন্ত কোনো ডাক্তারের কাছে না যেতে। ১৫ দিন পর পরীক্ষা করাতে বলেন। কিন্তু ১৫ দিন পরে এসে পরীক্ষা করা হলে তার টিউমার পেটের মধ্যে রয়ে গেছে বলে জানতে পারেন মিনু আরা। এখন যন্ত্রণায় চটপট করছেন এই হতভাগা নারী।

অসুস্থ মিনু আরা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাকে ফাঁদে ফেলে তারা নিয়ে অপারেশনের নাম করে টাকা নিয়েছেন। কোনো অপারেশন করেননি। আমি যখন তার কাছে এটা বলতে যাই, তখন তিনি আমাকে তার চেম্বার থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।’

মিনু আরার স্বামী সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘এখন আর কী করবো। পুলিশের কাছে অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আল্লাহ যদি সহায় হয়। অপারেশনের নামে আমাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন।’

নুর নাহারের একমাত্র সার্টিফিকেট

 

নিজের দোষ স্বীকার করে ভুয়া চিকিৎসক নুর নাহার চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার নাম কামরুন নাহার চৌধুরী। চিকিৎসাপত্রে ভুল নাম ব্যবহার করেছি। আমার যা করতে পারেন করেন গা। আমার কোনো সমস্যা নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমি নিয়মিত চিকিৎসা দেয়, কিন্তু কেউ অভিযোগ করেনি। অতিরিক্ত ফি নেয়ার বিষয়টিও সত্য নয়।’

এদিকে, মিনু আরার বর্তমান চিকিৎসকরা বলছেন, টিউমারের স্থানে উল্টো এখন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত যদি এখন উন্নত চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে বিপদ হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পার্কে কেউ অভিযোগ দেয়নি। যদি কেউ জানায়, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর