মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পরও পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা! এতদিন মাদকের খুচরা বাজার কথিত কয়েকজন ‘বড় ভাই’ নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে কিশোররা। পুলিশের তৎপরতায় কারবারীরা রাজপথ ছেড়ে নদী পথে ইয়াবা পাচার করছে। নদীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত টহল না থাকায় তারা এ পথ বেছে নিয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিত্যনতুন ও অভিনব কৌশল অবলম্বন করে ইয়াবা পাচার করছে। ফলে সব অভিযানে মাদক শনাক্ত বা জব্দ করা কঠিন। মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে নিয়ে আসা হয় এসব ইয়াবা।
তবে সম্প্রতি জেলার আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ ও পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর জানিয়েছেন, ইয়াবা কারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাঙামাটিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কার্যালয় থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। এ জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে।’
জেলার বিভিন্ন সংস্থা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইয়াবা কারবারীদের সমর্থন করছেন কয়েকজন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এতোদিন মাদকের খুচরা বাজার কথিত কয়েকজন ‘বড় ভাই’ নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে কিশোররা। এসব কিশোরদের কোনো রাজনৈতিক আদর্শ না থাকলেও তারা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় ব্যবসা করছে। যারা শহরের রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি, বনরূপা ও ভেদভেদী এলাকার বাসিন্দা।
একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শুধু রাঙামাটিতে অন্তত দুই হাজার মানুষ নিয়মিত ইয়াবা সেবন করেন। আর অন্তত ৮৫ জন কারবারী খুচরা পর্যায়ে প্রত্যক্ষভাবে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করছে।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকার আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী, ডেকোরেশন ব্যবসায়ী, সিএনজি মালিক-চালক, ফলের দোকানদার, তেল ব্যবসায়ী ও ট্রাক ড্রাইভার থেকে শুরু করে কসাই ইয়াবা বিক্রির সাথে জড়িত।
জানা গেছে, পুলিশের তৎপরতায় কারবারীরা রাজপথ ছেড়ে নদী পথে ইয়াবা পাচার করছে। নদীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত টহল না থাকায় তারা এ পথ বেছে নিয়েছে। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদকেই বর্তমানে ইয়াবা বিক্রির অন্যতম হাট বানিয়েছে কারবারীরা। তারা আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বোট বানিয়ে ইয়াবার ব্যবসা করছেন।
রাঙামাটি কোতয়ালী থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা অনেক সময় রাজনৈতিক তদবিরে অসহায়বোধ করি। কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার তদবিরে অতিষ্ঠ আমরা। আমাদের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অফিসাররা মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে পারছে না।’
তবে কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গত দেড় মাসে কোতয়ালী থানায় ২৩টি মামলায় ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, রাঙামাটিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যই ইয়াবা সেবন করেন। এমনকি তারা ইয়াবা চোরাচালানে সহায়তাও করেন।