রুপির বিপরীতে কমলো টাকার মান, বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব

যশোর, দেশের খবর

আজিজুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বেনাপোল (যশোর), বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 22:05:10

হঠাৎ করে ভারতীয় রুপির বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানি বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কমেছে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত।

এদিকে ভারতীয় রুপির মান বাড়ায় দুর্বল হয়ে পড়েছে ইউএস ডলারের বাজার মূল্য। কবে নাগাদ এ সংকট কাটবে তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না। তবে ব্যবসায়ীদের ধারণা ভারতে চলমান জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল না আসা পর্যন্ত এ মন্দা অবস্থা আর কাটছে না।

বিষয়টি নিয়ে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলা হয়।

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের মানি চেঞ্জার ব্যবসায়ী রায় ট্রেডার্সের চিরঞ্জিত রায় বার্তা২৪.কমকে জানান, বর্তমানে বাংলাদেশি ১০০ টাকায় ভারতীয় ৮২.৫০ রুপি ও ১শ ইউএস ডলারের বিপরীতে ভারতীয় ৬৮৫০ রুপি চলছে। যা গত মাসের শেষের দিকে (২০ মার্চ) বাংলাদেশি ১শ টাকায় ভারতীয় ৮৫ রুপি ও ১শ ইউএস ডলারে ভারতীয় ৭২০০ রুপি ছিল। বাংলাদেশি টাকার মান কমে আসায় পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত কমেছে বলেও জানান তিনি।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বার্তা২৪.কমকে জানান, ভারতীয় রুপির বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা ও ডলারের মান কমে যাওয়ায় আমদানি বাণিজ্যে কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এতে লোকসানের আশঙ্কায় তারা আপাতত আমদানি কমিয়েছেন।

বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৭৪ ট্রাক বিভিন্ন প্রকারের বাংলাদেশি পণ্য। আর ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১৮৪ ট্রাক পণ্য।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিয়াজ হোসেন বার্তা২৪.কমকে জানান, এর আগে প্রতিদিন এ পথে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেছে। এখন যাতায়াতের পরিমাণ কম।

ইমিগ্রেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৮ এপ্রিল বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে গেছেন ৩২৫৩ জন বাংলাদেশি, ৪৫৪ জন ভারতীয় ও অন্যান্য দেশের ৪ জন। ভারত থেকে এসেছেন ২৫৬৬ জন বাংলাদেশি, ৩৪৭ জন ভারতীয় ও অন্যান্য দেশের ৩ যাত্রী।

পাসপোর্টধারী যাত্রী ঢাকার মহাসিন জানান, তিনি ব্যবসায়ী কাজে মাসে দুই একবার ভারতে যান। কিন্তু বাংলাদেশি টাকার মান কম থাকায় গত মাসে একবারও যাননি।

আমদানিকারক পদ্মা এন্টারপ্রাইজের মালিক আতাউর রহমান জানান, এখন এলসি খুললে লাভ তো দূরের কথা পুঁজি বাঁচানো কষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া ভারতীয় রপ্তানিকারকরাও রুপির বাজার স্বাভাবিক হওয়ার পর এলসি খুলতে বলেছেন। তাই আপাতত আমদানি কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছেন। দ্রুত এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না পারলে জরুরি পণ্য ঘাটতির কারণে দেশে উৎপাদন ব্যাহত আমদানি পণ্যের বাজারমূল্য বাড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

জানা যায়, বাংলাদেশি কোনো আমদানিকারককে ভারত থেকে পণ্য আমদানির জন্য প্রথমে ভারতীয় রপ্তানিকারকের নামে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে পণ্যের বাজার মূল্যের সমপরিমাণ ইউএস ডলার দিয়ে এলসি খুলতে হয়। ভারতীয় রপ্তানিকারকরা নিজ অর্থে ওই পণ্য কিনে বাংলাদেশে পাঠান। বন্দর থেকে পণ্য খালাস করার পর রপ্তানিকারকরা ব্যাংক থেকে আমদানিকারকের পাঠানো এলসির টাকা উত্তোলন করে থাকেন।

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মধুমিতা স্টোরের রেজাউল ইসলাম জানান, নির্বাচনের ফলাফল না আসা পর্যন্ত এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম।

তিনি আরও জানান, ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপি পূর্বের তুলনায় কম থাকায় অনেকে ব্যাংক থেকে এলসির টাকা ওঠাচ্ছেন না। এতে তারাও লোকসানের শিকার হচ্ছেন।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১১ এপ্রিল থেকে ভারতে শুরু হয়েছে জাতীয় নির্বাচন। ১৯ মে শেষ হচ্ছে নির্বাচন। ফলাফল আসতে সময় লাগবে কমপক্ষে আরও ৫ দিন। সঙ্গে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে চলাফেরার উপর নজরদারি থাকছে প্রশাসনের। তাই অনেকে লেনদেন কমিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর