ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ইফতেখার উদ্দিন রানাকে (২১) রাঙামাটি শহরের টিএন্ডটি এলাকা গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। সংস্থাটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতার ইফতেখার উদ্দিন রানা ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরগনেশ গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে।
পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈনউদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পর রানা রাঙামাটির টিএনটিতে তার ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করেছিলেন। প্রযুক্তির সহায়তায় গত বুধবার মধ্যরাতে রাঙামাটি শহরের টিএনটি এলাকার একটি আবাসিক কোয়াটার থেকে রানাকে গ্রেফতার করা হয়। পিবিআই প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান নিশ্চিত করার পর তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
পিবিআই জানিয়েছে, নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তার ভাই যে মামলা করেছেন সেখানে ইফতেখার উদ্দিন রানার নাম নেই। তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতার তথ্য বেরিয়ে আসে। কারাগারে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে দেখা করে আসার পর তার অনুসারীরা হোস্টেলে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে নুসরাতকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ওই বৈঠকে ছিলেন ইফতেখার রানা।
রানাকে শনিবার ফেনীতে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রোববার এই আসামিকে আদালতে হাজির করা হবে।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, আগুন দেওয়ার সময় প্রথমে চারজনের নাম পাওয়া গেলেও তদন্তে তারা নিশ্চিত হন যে সেখানে পাঁচজন ছিলেন। ওই পাঁচজন হলেন, শাহাদাত হোসেন শামীম, যোবায়ের আহমেদ, জাবেদ হোসেন, অধ্যক্ষের ভায়রার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি ও কামরুন নাহার মণি। নুসরাতের সহপাঠী পপি ও মনিও এবার ওই মাদরাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই আসামি নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন গ্রেফতার হওয়ার পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে পুরো ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই জবানবন্দি অনুযায়ী চার এপ্রিল রাতে এক গোপন বৈঠকে নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। রাঙামাটি থেকে গ্রেফতার হওয়া ইফতেখার উদ্দিন রানাও উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে।
এদিকে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকা থেকে এমরান হোসেন মামুন নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত মামলার এজহারের ৮ জনসহ মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ৫ জন। ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ নুসরাতের মা শিরীনা আক্তার মামলা করার পরদিন সিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মামলা প্রত্যাহার না করায় ৬ এপ্রিল পরীক্ষার হল থেকে মাদরাসা একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন দেয় বোরকা পরা কয়েকজন। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত।