পা হারিয়েও থেমে নেই বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকুল

বরগুনা, দেশের খবর

ইমরান হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বরগুনা, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 13:36:45

পা হারিয়ে চিকিৎসা করাতে না পেরে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন বরগুনার এক মুক্তিযোদ্ধা। সহায়তার জন্য আবেদন করেও সহায়তা পাননি। তবে থেমে যাননি ওই মুক্তিযোদ্ধা। অসুস্থ শরীর নিয়ে গড়ে তুলেছেন মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা কেন্দ্র ৯ম সেক্টর ১৯৭১। লিখেছেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই। নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার লেমুয়া গ্রামের হাজী নুরুল ইসলামের ছেলে শহিদুল ইসলাম মুকুল। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে নবম সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করে পাথরঘাটায় রায়হানপুর ইউনিয়নে সর্বপ্রথম লাল সবুজ পতাকা উড়ান তিনি। এর পরেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা শুরু করেন অনেক বই। নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেন মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা কেন্দ্র ৯ম সেক্টর ১৯৭১।

তবে ভাগ্যের নির্মমতায় ২০১৭ সালে একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এক পা হারান মুকুল। প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কিছুটা সুস্থ হলেও টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে তার চিকিৎসা। তবে থেমে যাননি মুকুল। স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

শারমিন, নাদিরা মিম, মিতু, আফরিন, মৌরিন, সাইফুল, তকদির, সোহেলসহ পাথরঘাটার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মুকুলের কাছে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার আসেন তারা। তার মুখেই শোনেন মুক্তিযুদ্ধের নানান ঘটনা।’

পাথরঘাটা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল খালেক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মুকুল দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে। দেশ স্বাধীন করেও সে এখন পরাজিত। টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রশাসনের কাছে ঘুরেছেন। তবে মেলেনি সহায়তা।’

আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মুকুল পা হারিয়েও থেমে থাকেনি। গড়ে তুলেছেন মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা কেন্দ্র ৯ম সেক্টর ১৯৭১। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাঁথার এখনই সময় নামে একটি পাণ্ডুলিপি। লিখেছেন বেশ কিছু বই। তবে সরকারের উচিত মুকুলকে সহায়তা করা।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মুকুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছিলাম। তবে দেড় বছর পার হলেও এখনো সহায়তা পাইনি। নিয়তির কাছে হয়তো এক সময় হেরেই যাবো আমি। এই গবেষণা কেন্দ্রটিও বিলুপ্তি হয়ে যাবে, যদি সরকার হস্তক্ষেপ না করে।’

এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অতিদ্রুত বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মুকুলকে সহায়তা করা হবে। আর মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা কেন্দ্র ৯ম সেক্টর ১৯৭১ যাতে বন্ধ না হয় সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিবেন তিনি।’

উল্লেখ্য, উপজেলার ইজারার টাকা থেকে ৪% টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য রাখা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর