ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সামীন্তবর্তী শ্যামগঞ্জ বাজারে ‘ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে তৈরি ‘বিএইউ-এসটিআর ড্রায়ার (ধান শুকানো যন্ত্র)’ মেশিন তৈরির কাজ তদারকি করতে কারখানা পরিদর্শন করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রর্বাট মিলার।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল দশটায় ময়মনসিংহ জেলা থেকে শ্যামগঞ্জ পৌঁছান এই রাষ্ট্রদূত। এ সময় তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান নেত্রকোনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া, পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নমিতা দে ও ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক।
কারখানা পরিদর্শন সময়ের সন্তোষ প্রকাশ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রর্বাট মিলার বলেন, ‘আমি একজন প্রেসিডেন্টের সন্তানের চেয়ে কৃষকের সন্তান পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমার বাবা-মা কৃষক। আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। এখানের গ্রামের কৃষকরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি করে যাচ্ছে, সেটা সত্যিই প্রশসংনীয়।’
জানা গেছে, আমেরিকার অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিশক্তি ও যন্ত্রবিভাগের প্রফেসর ডক্টর মো. মঞ্জুরুল আলম ও প্রফেসর ডক্টর চয়ন কুমার সাহা বিএইউ-এসটিআর ড্রায়ার (ধান শুকানোর) মেশিন উদ্ভাবন করেছেন। ২০১৫ সালে এই ড্রায়ার মেশিনটি উদ্ভাবনের পর বাণিজ্যিকভাবে দেশের বিভিন্ন কারখানায় এই মেশিন তৈরি হচ্ছে। শ্যামগঞ্জের ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ার ওয়ার্কশপ ওই মেশিন তৈরি করছেন। সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত ময়মনসিংহ এসে জেলার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে বের হন। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকালে তিনি শ্যামগঞ্জ বাজারে ড্রায়ার মেশিন কারখানা পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রফেসর ডক্টর মোঃ মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘আমেরিকার অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিশক্তি ও যন্ত্রবিভাগ থেকে গবেষণা করে আমরা ২০১৫ সালে এই মেশিন ড্রায়ার মেশিন উদ্ভাবন করি। এরপর দেশের ৪৩টি উপজেলার কৃষকের মাঝে এটি ছড়িয়ে দিতে পেরেছি। ২০১৬ সাল থেকে এটি বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন কারখানায় তৈরি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু ড্রায়ার মেশিন উদ্ভাবনের কাজটি আমেরিকার অর্থায়নে হচ্ছে। তাই কাজের তদারকি করতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত শ্যমাগঞ্জের ওই কারখানা পরিদর্শন করেছেন।’
ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের সত্ত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও ফর্মুলা অনুসরণ করে আমরা এই ড্রায়ার মেশিন তৈরি করছি। প্রতিটি মেশিন তৈরিতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এই মেশিনে এক সাথে ১০ থেকে ১২ মণ ধান শুকানো যাবে। মূলত বৃষ্টি কিংবা বৈরি আবহাওয়ায় কৃষকের উৎপাদিত ধান শুকাতে যেনো দুর্ভোগ না হয়, সেই দিক বিবেচনা করেই বৈদ্যুতিক এই ড্রায়ার মেশিন তৈরি করা হয়েছে।’
কারখানা পরিদর্শনকালে স্থানীয়দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী সুরজিৎ সরকার, পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ তাওহিদুর রহমান, অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মিজানুর রহমান, গোয়ালাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আল মামুন শহীদ ফকির, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মতিউর রহমান খান, আব্দুল কদ্দুস তালুকদার, মিল মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।