কখনো শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হয়, কখনো আবার হয় না। কখনো চতুর্থ ঘণ্টার পর ছুটি হয় বিদ্যালয়। কখনো আবার দুই-তিনটা ক্লাস করিয়ে ছুটির আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আটকে রাখা হয়। এভাবেই চলছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর আর. কে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়াও আছে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের অভাবসহ নানা সমস্যা। এতে ফলবিপর্যয় দেখা দিয়েছে বিদ্যালয়টিতে।
গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিুবর রহমান ফকির বলেন, পাঁচ শিক্ষক প্রেষণে থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহালদশা হয়েছে। শিক্ষকদের প্রেষণ বাতিল ও বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে অভিভাবকরা মানববন্ধন করে ও মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। দ্রুত এই সমস্যা সমাধান না করা হলে আমরা অভিভাবকরা কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
জানা যায়, ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত গৌরীপুর আর. কে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামি কুড়িয়ে আসছিল। গত দুই বছর ধরে বিদ্যালয়ে দেখা দিয়েছে ফল বিপর্যয়। ২০১৭ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় বিদ্যালয় থেকে ৩৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ পেলেও পরের বছর ২০১৮ সালে একই পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পায় মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৬৮২জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানে প্রধান শিক্ষকসহ ১৮ জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। এরমধ্যে ২০১৭ সালের পর ভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ের চারজন সহকারি শিক্ষক প্রেষণে ময়মনসিংহ জেলার ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে সংযুক্ত হন।
২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এসএম তাসফিকুল হায়দার এমএড প্রশিক্ষণের জন্য ছুটিতে আছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ এপ্রিল বিদ্যালয়ের একমাত্র উচ্চমান সহকারি মো. কামরুজ্জামানও ময়মনসিংহ ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রেষণে সংযুক্ত হয়েছেন। এরপর থেকে প্রধান শিক্ষকসহ ১৩জন শিক্ষক দিয়ে চলেছে বিদ্যালয়ের পাঠদান।
এদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রেষণ বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা করিম বলেন, বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছি। দ্রুত এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায় শ্রেণিকক্ষগুলো ফাকা। শিক্ষার্থীরা বাইরে ছোটাছুটি করছেন। ১৩ জন শিক্ষকের মধ্যে উপস্থিত আছেন মাত্র ১০ জন শিক্ষক।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিতে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ছুটিতে আছেন। আর অপর দুই শিক্ষকের মধ্যে একজন প্রশিক্ষণে ও আরেকজন ব্যক্তিগত কাজে ছুটি নিয়েছেন।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জোবায়িদ হাসান আপন বলেন, আমাদের নিয়মিত পাঠদান হয়না। বিজ্ঞান বিভাগে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব থাকার কারণে এক শিক্ষকের পাঠদান অন্য শিক্ষক করাচ্ছেন। এতে আমাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।’
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিজন চন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়টি আমরা স্থানীয় এমপি মহোদয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত সঙ্কট সমাধান হবে”।