বিশাল আকৃতির পাল তোলা নৌকা। মাঝখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। দূর থেকে একবার চোখে পড়লে এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। নৌকার পালে ফুটে উঠেছে মহান স্বাধীনতার স্থপতির তিনটি ছবির বহিঃপ্রকাশ। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সমৃদ্ধে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে এই নৌকা।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় নির্মিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত এই পাল তোলা নৌকার কারণে এখন ট্রাফিক মোড়ের নামকরণ হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’। আকর্ষণীয় এই চত্বরে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন। যারা আসেন তাদের অনেকেই ঘুরে ফিরে এই চত্বরে একটু সময় কাটিয়ে যান। আর কেউ কেউ বঙ্গবন্ধু চত্বরে নিজেকে করে নেন ক্যামেরার ফ্রেমবন্দি।
বিশাল আকৃতির দৃষ্টিনন্দন এই নৌকার সম্মুখে দেখানো হয়েছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানকে। রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ জনতার সামনে হাত উঁচিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর পাশে আছে সাহসি উচ্চারণ-‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ব্যতিক্রম নৌকার ডানে-বামেও একাত্তরের কাণ্ডারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এই চত্বরে দাঁড়িয়ে মনে হতে পারে, নদীর বুকে ভাসমান পাল তোলা নৌকা যেমন বাতাসের তেড়ে ছুটতে থাকে গন্তব্যে। তেমনি জাতির জনকের প্রতিকৃতি সম্বলিত এই পাল তোলা নৌকা দিয়ে বোঝানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদান।
জলঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণের। সেই দাবির প্রেক্ষিতেই ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট উদ্বোধন করা হয় আধুনিক এই বঙ্গবন্ধু চত্বরটির। নীলফামারী জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে নির্মিত এই ম্যুরালে ব্যয় হয়েছে ২৯ লাখ টাকা।
ঢাকার ভাস্কর শাওন সগীর সাগরের অনবদ্য নির্দশন বঙ্গবন্ধুর এই ম্যুরালটি। তার শৈল্পিক সৃষ্টির মধ্যে পাল তোলা নৌকায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার প্রয়াস সৌন্দর্য্য বার্তা ছড়িয়েছে। যা দেখলে নতুন প্রজন্মের চোখে ভাসবে একজন বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ।
জলঢাকা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নুরনবী রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চত্বরটি আমাদের এই উপজেলাকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি আকর্ষণও বাড়িয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় প্রশাসনের অবহেলার কারণে চত্বরটি স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী ও থ্রি হুইলার চালকের দখলে চলে যাচ্ছে।’
জলঢাকা উপজেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গাফফার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দিতে সহায়ক ভুমিকা রাখছে বঙ্গবন্ধুর এই ম্যুরাল। তাই এর চারপাশকে ঘিরে কেউ যাতে ব্যবসার পরসা নিয়ে বসতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
অন্যদিকে নীলফামারী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে জেলার প্রতিটি উপজেলায় এ রকম ম্যুরাল ও স্বাধীনতার ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’