সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, শিশু মাহির বাবা আসছে না। আসবেই বা কিভাবে? তলিয়ে নিয়ে গেছে খরস্রোতা মেঘনা নদী। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত। এখনও পুলিশ সদস্য মোশাররফ হোসেনের খোঁজ মেলেনি। জেলেদের হামলায় মেঘনা নদীতে ডুবে যান এই পুলিশ সদস্য। সে চাঁদপুরের হাইমচর থানায় কর্মরত ছিলেন।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে হাইমচর উপজেলায় চরকোড়ালিয়া নামকস্থানে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেফতার করতে গেলে এই ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ মোশাররফ চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থানার বারকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা। গত কয়েক বছরই হাইমচর থানায় কর্মরত রয়েছেন।
তার একমাত্র সন্তান চার বছরের শিশু মাহির। স্ত্রী শামীমা আক্তার স্বামী মোশাররফের মৃতদেহ একবার দেখার সুযোগ পাবে কিনা সে নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। কাঁদছেন, শিশু মাহিরকে জড়িয়ে কাঁদছেন। কিন্তু দুরন্তপনা শিশু মাহির জানেনা তার বাবা আর ফিরবে কী ফিরবে না।
পুলিশ সদস্য মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী শামীমা আক্তারও পুলিশ সদস্য। স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই গত দুই বছর একসাথেই চাকরি করছেন ওই হাইমচর থানায়। ছয় বছর পূর্বে তাদের বিয়ে হয়।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকাল পর্যন্ত চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে তার সন্ধান পায়নি। থানা পুলিশ জানায়, রাতে মেঘনার পশ্চিম পাড়ে চরপোড়ালিয়া এলাকায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আটক করার জন্য ৪ পুলিশ সদস্য, ২ গ্রাম পুলিশ, ১জন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য ও নৌকার মাঝিসহ অভিযান চালায়।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধনকারী মেঘনার পাড়ে থাকা সংঘবদ্ধ জেলেরা তাদেরকে আটক করা হবে সন্দেহে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ৫ রাউন্ড ফাঁকাগুলি করে। ওইসময় জেলেদের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন পুলিশ সদস্য মোশাররফ।
কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, রাতের বেলায় মতলব উত্তর মোহনপুর এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ জেলেরা এখানে জাটকা ধরে। তারা কমপক্ষে ৫০ নৌকা একত্রে এসে এখানে মাছ ধরেন। প্রশাসনের লোকজন অভিযান করতে গেলে চারদিক থেকে তারা হামলা করে। শুক্রবার রাতের ঘটনাটি হয়তো এমনটিই হয়েছে।
মোশারফের স্ত্রী শামীমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছেন, ‘আমার স্বামীকে দেখতে চাই। শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টায় অভিযানে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হয়। রাত ২টার দিকে বাসায় খবর দেয়া হয় মোশাররফকে পাওয়া যাচ্ছে না।’
হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুহসিন আলম জানান, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও মোশাররফ নিখোঁজ হয়। তারপর ফায়ার সার্ভিস কোস্টগার্ডসহ নদীতে উদ্ধার অভিযান চালালেও এখনো মোশাররফকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
চাঁদপুর ফায়ার স্টেশনের ডেপুটি এ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর ফরিদ আহমেদ জানান, খবর পেয়ে রাত থেকেই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। কিন্তু বিকাল পর্যন্ত কোথাও পুলিশ সদস্যের হদিস পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, কোথায় নিখোঁজ হয়েছে সে স্থানটিও সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বা কোস্টগার্ড।
আরও পড়ুন: জেলেদের হামলায় মেঘনায় পুলিশ সদস্য নিখোঁজ