প্রবাসী বাবার সন্তান আট বছর বয়সী রুমান। প্রতিদিনের মতো রোববার (২৮ এপ্রিল) সকালেও বিদ্যানিকেতনে যাওয়ার উদ্দেশে মায়ের হাত ধরে ঘর থেকে বের হয়। বিদ্যালয়ের নাম কালিয়াপাড়া বিদ্যানিকেতন। কিন্তু বিদ্যালয়ে আর যাওয়া হয়নি রুমানের। ঘাতক বাসের চাপায় মাসহ প্রাণ হারিয়েছে রুমান।
রুমানের বাবা মো. হাসান বর্তমানে ছুটিতে বাড়িতে আছেন। সাজসকালে আদরের সন্তান ও স্ত্রীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হাসান।
রোববার সকালে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার কাকৈরতলা বাজার সংলগ্ন স্থানে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশু রুমান। তার মা জান্নাতুল ফেরদৌসকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। এই দুর্ঘটনায় শেষ পর্যন্ত ছয় জন প্রাণ হারান।
খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে এসে নিজের ছেলেকে দেখে কোন রকমেই মেনে নিতে পারছিলেন না হাসান। চিৎকার দিয়ে কান্না করে বলছেন, ‘আমার সন্তানকে ছাড়া, আমি বাড়ি যাব না।’ হাসান কচুয়া উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা।
নিহত পাঁচ জনের একজন রঞ্জিত চন্দ্র। তিনি কালিয়াপাড়া পঞ্চগ্রাম আজিজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী। তার গ্রামের বাড়ি কচুয়া উপজেলার আশরাফপুর ইউনিয়নের পিপলকরা গ্রাম। স্কুল থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে প্রাণ হারান রঞ্জিত।
নিহত আবুল কালাম তার মেয়ের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে আসার পথে এ দুর্ঘটনার শিকার হন। তার ছেলে বাবুল বাবার মৃতদেহের পাশে এসে বিলাপ করছেন।
এদিকে বৃদ্ধা ফখরুল ইসলাম একটি পারিবারিক মামলায় হাজিরা দিতে চাঁদপুর আদালতে রওনা হয়েছিলেন।
দুর্ঘটনাকবলিত সেই সিএনজির রেজিস্ট্রেশন ছিল না। এক সিএনজিতে মোট সাত যাত্রী ছিল। সিএনজি চালকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকেসহ আরেক যাত্রী মো. শাহজাহানকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে শাহজাহান মারা যান।
দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে আসেন শাহরাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম ও মেহার উত্তর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন। তারপর একে একে ঘটনাস্থলে আসেন সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শেখ রাসেল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শাহরাস্তি উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি উম্মে হাবিবা মিরা ও হাজিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া।
রোববার সকালে শাহরাস্তির কাকৈরতলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় কর্ডোভা পরিবহনের একটি বাস ও একটি সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে ছয় জন নিহত হন। দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও সিএনজি জব্দ করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- রঞ্জিত চন্দ্র (৫২), ফখরুল ইসলাম (৭৫), আবুল কালাম (৬২), মো. শাহজাহান, জান্নাতুল ফেরদৌস (২৮) ও শিশু রুমান (৮)। এছাড়া চালককে গুরুতর আহত অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।