অবৈধ পাথর উত্তোলনে অস্তিত্ব সংকটে পঞ্চগড়ের ডাহুক নদী

পঞ্চগড়, দেশের খবর

মোহাম্মদ রনি মিয়াজী ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট পঞ্চগড়, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 05:42:01

দেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড় পাথরের রাজ্য নামে বেশ খ্যাত। কারণ এ জেলার কয়েকটি নদীতে নুড়ি পাথর পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম তেঁতুলিয়ার ডাহুক নদী। কিন্তু এ নদীতে সরকারি নিয়মনীতি অমান্য করে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে নদীটি গভীরতা ও গতিপথ হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে ঐতিহ্যবাহী এ ডাহুক নদী এখন শুধু নব্যতা সংকটেই নয়, পড়েছে চরম অস্তিত্ব সংকটে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাইকোর্টে নির্দেশ অমান্য করে সরকারি নিয়মনীতি না মেনে অপরিকল্পিতভাবে প্রাকৃতিক বিধ্বংসী অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে এ নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা বার্তা২৪.কমকে জানান, উপজেলাধীন শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, গুচ্ছ গ্রাম, লোহাকাচী, বালাবাড়ি, কালিতলাসহ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বালাবাড়ি, কাটাপাড়া, সরকারপাড়া ও হারাদিঘী এলাকায় ডাহুক নদীতে কয়েকশ প্রাকৃতিক বিধ্বংসী অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে কিছু অসাধু পাথর ব্যাবসায়ী। তারা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, প্রশাসন ও স্থানীয় বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক বিভিন্ন নেতাকে ম্যানেজ করে রাতের আধারে এসব কাজ করছেন। ফলে একদিকে যেমন প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি মেশিনের বিকট শব্দে ঘুমাতে পারে না এলাকাবাসী।

পঞ্চগড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও নদীর গতিপথ নিশ্চিত করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন কাজ করে আসছে। তারা অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ ও নদীর গতি পথ নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন, সচেতনতামূলক মাইকিং, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ, পথনাটকসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন নাটকীয়তায় এই মেশিনগুলো বন্ধ হলেও কিছুদিন পর আবারও চালু হয় বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সামাজিক সংগঠন জাগ্রত তেঁতুলিয়ার সদস্য রাব্বী ইমন বার্তা২৪.কমকে বলেন ‘আমরা নদীর গতি পথ নিশ্চিত করার দাবিতে ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর তোলা বন্ধ করার জন্য অনেক কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও চালু হয় ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন।’

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহুরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা ডাহুক নদীর সীমানা খুজে পাচ্ছি না। ফলে আমরা অভিযান চালাতে পারছি না। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যদি নদীর নির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণ করে তাহলে পরবর্তীতে নদীর গতিপথ বন্ধ করে কেউ পাথর উত্তোলন করলে আমরা ব্যবস্থা নিব।’

এদিকে পঞ্চগড় জেলা নদী সংরক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব ও পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পঞ্চগড়ের নদীর সীমানা চিহ্নিত করে দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় মৌজা ম্যাপ ও জনবল সংকটের কারণে নদীর সীমানা চিহ্নিত করার কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর