৩০ এপ্রিল ১৯৭১ সাল। এই দিনে শেরপুরের ঝিনাইগাতীর জগৎপুর গ্রামে পাকবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৪৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। তখন আহত হয়েছিল অর্ধশত মানুষ, পাকবাহিনী জ্বালিয়ে দিয়েছিল জগৎপুর গ্রাম। এতে ২০০ এর বেশি বাড়ি-ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। তবে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও এই গ্রামে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের গণকবর।
শেরপুর শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রাম। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক বাহিনী আর দেশীয় দোসররা গ্রামটিকে তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে। আর গ্রামের মানুষ প্রাণ ভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশের রঙ্গবিলে। সেদিনের বর্বরোচিত হামলায় নিহত হন ৪৫ জন।
ভয়াল সেই স্মৃতি বুকে নিয়ে নিরীহ গ্রামবাসী জানায়, সেদিন ছিল বাংলা ১৬ বৈশাখ, ৩০ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ৮টা। পাশের সংকর ঘোষ গ্রাম থেকে স্থানীয় রাজাকার মজিবর, বেলায়েত, নজর ও কালামের সহযোগিতায় পাক বাহিনী তিন দিক থেকে জগৎপুর ঘিরে ফেলে। পরে পাক বাহিনী নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। এ সময় কোনো কিছু না বুঝেই জীবন বাঁচাতে রঙ্গবিলের দিকে দৌড়ে পালাতে থাকে স্থানীয়রা। ওই ঘটনায় ৪৫ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
শুধু গুলি করে গ্রামবাসীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাক সেনারা। তারা শূন্য গ্রামের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনার প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর পাক সেনারা চলে যায়।
পরে স্থানীয়রা ফিরে এসে লাশগুলো একটি জঙ্গলের কাছে গণকবর দেয়। ওই গণ কবরের পাশেই বর্তমানে হিন্দুদের শ্মশান ঘাট রয়েছে। কিন্তু ওই গণকবরের স্থানটি আজো সংরক্ষিত না করার জন্য ক্ষোভ রয়েছে গ্রামবাসীর। শুধু গণকবরে স্মৃতিসৌধ তৈরিই নয়, সেদিনের হত্যাকাণ্ডে কতজন প্রাণ দিয়েছিলেন এর সঠিক তালিকা নির্ণয় করার দাবিও জানিয়েছে স্থানীয়রা।