ঘাস চাষে স্বাবলম্বী কৃষক

গাইবান্ধা, দেশের খবর

তোফায়েল হোসেন জাকির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গাইবান্ধা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 13:07:30

গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার মাঠ পর্যায়ে নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে ঘাস চাষ করে এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন স্বাবলম্বী। অল্প সময়ে স্বল্প জমিতে ঘাস চাষ করে লাভজনক হওয়ায় কৃষকরাও ঝুঁকছে এই কাজে।

গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে দেশে চারণভূমিতে গরু বেঁধে ঘাস খাওয়ানো হতো। সেই সময়ে কৃষকদের অনেক জমিই পতিত থাকত। বর্তমানে কৃষি ক্ষেত্রে নানা প্রযুক্তি আসায় এখন কেউ আর জমি পতিত রাখে না। এমনকি জনসংখ্যা বাড়ায় চারণভূমির পরিমাণও দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই আগের মতো গবাদিপশু মাঠে বেঁধে ঘাস খাওয়ানো যায় না। ফলে ঘাস সংকট দেখা দেয়।

জানা গেছে, গৃহপালিত পশু পালন লাভজনক হওয়ায় গাইবান্ধায় প্রায় প্রতিটি পরিবারেই গরু-ছাগল পালন করা হয়। সেই সঙ্গে এ অঞ্চলে বেশ কিছু ডেইরি খামার গড়ে উঠেছে। এসব গবাদিপশুর ঘাস সংকট নিরসন এবং অর্থকারী হিসেবে ফসলি জমিতে নেপিয়ারসহ বিভিন্ন জাতের ঘাস চাষ করা হচ্ছে।

পলাশবাড়ী উপজেলার মহেশপুর গ্রামের কৃষক সুবল চন্দ্র ঘাস চাষাবাদ পদ্ধতির বিষয়ে বার্তা২৪.কমকে জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়া নেপিয়ার ঘাস চাষের উপযোগী। এর পাতা ও কাণ্ড দেখতে অনেকটা আখ গাছের মতো। জলাবদ্ধ স্থান ছাড়া সব মাটিতে চাষ করা যায়। নেপিয়ার ঘাস যেকোনো সময় রোপণ করা যায়। প্রতি হেক্টর জমির জন্য ইউরিয়া ৫০ কেজি, টিএসপি ৭০ কেজি, এমপি ৩০ কেজি দিতে হয়। বপনকরা বীজ গজানোর পর খরা মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দিতে হয়। ঘাস লাগানোর পর ৬০-৮০ দিন পর কাটার উপযুক্ত সময়। একবার ঘাস লাগালে বছরে ছয়বার ফসল তোলা যায়।

সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট এলাকার কৃষক খবির উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সেচ, সার ও শ্রমিকসহ প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ঘাস চাষে খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকা। তবে বছরে ঘাস বিক্রি করা যায় প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে গত তিন বছর ধরে ঘাস চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছি।’

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, গবাদিপশুর জন্য নেপিয়ার ঘাস খুবই পুষ্টিকর খাবার। এ ঘাস খাওয়ালে অল্প দিনের মধ্যে গরু মোটাতাজা হয় এবং অধিক দুধ পাওয়া যায়।

ঘাস ব্যবসায়ী বকুল মিয়া বার্তা২৪.কমকে জানান, নেপিয়ার ঘাসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে কৃষকদের কাছ থেকে ঘাস কিনে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। প্রতি আঁটি ঘাস ১০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়।

ঘাস ক্রেতা জসিম সরকার বার্তা২৪.কমকে জানান, গ্রামাঞ্চলের মানুষের সচ্ছলতার চাবিকাঠি হচ্ছে গৃহপালিত পশু। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- গরু মোটাতাজাকরণ ও দুগ্ধ জাতের গাভী পালন। এমনকি ছাগল পালনও লাভজনক। তাই নেপিয়ার ঘাস কিনে গরুকে খাওয়ানো হয়।

গাইবান্ধা জেলার কৃষি অফিসার আজিজুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, ঘাস চাষ অত্যন্ত লাভজনক। গত বছরের তুলনায় কৃষকরা এ বছর ঘাস চাষে বেশি ঝুঁকেছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর