বাংলাদেশের সীমানায় ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন ফণী। ভারতের ওড়িশায় এরই মধ্যে আঘাত হানা ফণী শনিবার (৪ মে) সকাল নাগাদ খুলনা উপকূলসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে। এখানকার মানুষ সাধারণত কালবৈশাখী ঝড় দেখলেও বড় কোনো ঘূর্ণীঝড় দেখেনি। সংবাদ মাধ্যমে ফণী’র খবর শুনে কদিন ধরেই আতঙ্কে দিন কাটছে এ জেলার মানুষের।
শুক্রবার (৩ মে) বেলা ১১টার পর হতে বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মার ওপারে অর্থাৎ পাঁকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ আতঙ্কে সময় পার করছে। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, নদীর ওপারে প্রায় ১০টি ছোট বড় গ্রাম রয়েছে। ওই সব গ্রামে নেই কোনো দালান কোঠা, নেই আশ্রয় কেন্দ্র। একটি মাত্র পাকা ভবন রয়েছে। উত্তরপাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
শুক্রবার রাত ৯টায় বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথা হয় রাসেল রহমান নামের এক সমাজ কর্মীর সঙ্গে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘পদ্মার সর্বনাশা গ্রাসে হাজার হাজার মানুষ ঘর বাড়ি হারিয়ে আজ নিঃস্ব প্রায়। যার কারণে কেও পাকা দালান কোঠা বানাতে পারেনা। ঘূর্ণীঝড় ফণী আঘাত হানলে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে পুরো এলাকা।’
স্থানীয় বাসিন্দা মো.বাবু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এখন (রাত ৯টা) প্রচণ্ড জোরে ঝড়সহ বৃষ্টি হচ্ছে। সুপার সাইক্লোন ফণী যদি আঘাত হানে আমাদের এলাকার মানুষ বেশি বিপদে পড়বে। কারণ, গ্রামের যতগুলো বাড়ি আছে সবগুলোই টিন,খড় দিয়ে বানানো। আশেপাশে বড় গাছ বা ভবন না থাকায় কোথাও যাবার জায়গা নেই। মূল্যবান যা আছে সব বিলিন হয়ে যাবে পদ্মা নদীতে।’
পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নদীর ওপারে একটি মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাকা ভবন রয়েছে। এছাড়া আর কোনো নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র নাই। ঝড় হলে সব তছনছ হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা পাড়ের চরাঞ্চলবাসীকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে বার বার বলা হচ্ছে কিন্তু নিরাপদস্থান দীর্ঘপথ হওয়ায় ঘর বাড়ি ছেড়ে অনেকেই যেতে চাচ্ছে না।’
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী রওশন ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সব রকমের সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে। তার পরও কেউ যদি না আসে তবে আমাদের কিছুই করার নাই। এরপরও আমাদের সব ধরনের প্রস্ততি রয়েছে’
আবহাওয়া অফিসের সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারে মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণী কিছুটা দুর্বল হয়ে ভারতের উপকূলীয় ওড়িশায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সকালের মধ্যে খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। ফণীর প্রভাবে বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারে মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।