হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মণিপুর গ্রামের বাসিন্দা হক মিয়া। পরিবার পরিজন নিয়ে রাতে বসত ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। মাঝরাতে হঠাৎ তার ঘরটি কুশিয়ারা নদীতে ভেঙে পড়ে। কোনো রকমে সাঁতরিয়ে পাড়ে ওঠেন ওই পরিবারের ৫ সদস্য। এতে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও পানিতে ভেসে যায় বসত ভিটা ও ঘরে থাকা আসবাবপত্র।
শুধু হক মিয়াই নয়, নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ১০টি গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার। যুগ যুগ ধরে এ অবস্থা চলে আসলেও নদী ভাঙন থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
শুধু বর্ষা মৌসুমেই নয়, শুষ্ক মৌসুমেও নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না এসব অসহায় গ্রামবাসী। কুশিয়ারা শুধু বসত ভিটাই গ্রাস করেনি, গ্রাস করেছে মসজিদ-মাদরাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও।
বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম চললেও ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে হবিগঞ্জে টানা তিনদিন বৃষ্টি হয়। এর ফলে বৃদ্ধি পায় কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এতে আতঙ্ক দেখা দেয় কুশিয়ারার তীরবর্তী মানুষের মধ্যে। ভাঙন দেখা দেয় নতুন করে। নতুন করে বিলীন হয় বেশ কয়েকটি বসত ভিটা।
ভাঙন কবলিত গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুশিয়ারার নির্মমতায় প্রতি বছরই শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে। পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। আবার সম্প্রতি সময়ে ভাঙনের কবলে পড়া অনেক পরিবার অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকের বসত ভিটার সঙ্গে কুশিয়ারার ঢেউয়ে মিশেছে সারা জীবনের সঞ্চয়ও।
সবচেয়ে বেশি ভাঙনের কবলে রয়েছে বদরপুর, মণিপুর, শৌলরী, মির্জাপুর, জয়নগর, ঋণি হাটি, কাদিরপুর, নজরকান্দি। এসব গ্রামের মানুষদের সারাক্ষণ নদী ভাঙন আতঙ্কে থাকতে হয়।
এ ব্যাপারে মণিপুর গ্রামের বাসিন্দা হক মিয়া বলেন, ‘পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ সম্পূর্ণ ঘরটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এ ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পেলেও আমার সারা জীবনের সঞ্চয় পানিতে ভেসে যায়।’
শৌলরী গ্রামের আবু ফজল বলেন, ‘নদী ভাঙনের কারণে আমরা এখন নিঃস্ব। পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে।’
একই গ্রামের দিদার মিয়া বলেন, ‘প্রতিনিয়ত নদী ভাঙলেও সরকার আমাদের রক্ষা করতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। আমরা অনেক অসহায়।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খন্দকার জানান, বর্তমানে নদী ভাঙনের প্রতিবেদন তৈরি করছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। প্রতিবেদন তৈরি হলেই সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান বলেন, ‘সম্প্রতি আমি কুশিয়ারার পাড় পরিদর্শন করে এসেছি। বানিয়াচং উপজেলার মার্কুলী এলাকা থেকে নদী ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে। এছাড়া বাকি অংশের কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।’
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বানিয়াচং উপজেলার মার্কুলী এলাকা থেকে নদী ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে সব এলাকাতেই কাজ শুরু হবে। আমরা আশা করি ২০১৯ সালের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে।’