সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী। তাঁর মৃত্যুতে হবিগঞ্জসহ সারাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কেউই মেনে নিতে পারছেন না সুবীর নন্দীর এভাবে চলে যাওয়াকে। কিন্তু তাঁর শেষ ইচ্ছা কি পূরণ হচ্ছে না ?- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁর জন্মভূমি হবিগঞ্জের মানুষের মনে।
হবিগঞ্জসীর দাবি, সুবীর নন্দীর শেষ ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর যেন তাঁর শেষকৃত্য হয় জন্মভূমি হবিগঞ্জে। বিভিন্ন সময় তিনি হবিগঞ্জে এসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এমন বক্তব্য রাখতেন। সম্প্রতি হবিগঞ্জ জালাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত লোকজ সাংস্কৃতিক উৎসবে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময়ও এই ইচ্ছা পোষণ করেন।
কিন্তু তাঁর শেষ ইচ্ছার বিপরীতে পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি করছেন হবিগঞ্জে সুবীর নন্দীর একাধিক নিকটজন। ঢাকার সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য হবে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন হবিগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরের জনগণ। বরেণ্য এই শিল্পীর শেষ ইচ্ছে কেন পূরণ করছে না তাঁর পরিবার- এ নিয়ে হবিগঞ্জে চলছে আলোচনা।
হবিগঞ্জ জেলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোটের সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘তিনি (সুবীর নন্দী) বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ ঘরোয়াভাবে আমাদেরকে শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন- তাঁর শেষ ইচ্ছে হবিগঞ্জে যেন তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। আমি তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি, কিন্তু তারা হবিগঞ্জে শেষকৃত্য করাতে রাজি নন।’
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা রফিক বলেন, ‘সুবীর নন্দী হবিগঞ্জের সন্তান, হবিগঞ্জের প্রতিটি বালুকণায় তাঁর অস্তিত্ব আছে। তিনি বিভিন্ন সময় বলতেন, তাঁর শেষকৃত্য যেন হবিগঞ্জে হয়। কিন্তু পরিবারের সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক।’
সুবীর নন্দীর শিক্ষক, হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক নিখিল ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘সুবীর আমার খুব প্রিয় ছাত্র ছিল। কিন্তু তাঁর চলে যাওয়ার সংবাদ শোনার পর আমি যেন বিশ্বাস করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘সুবীর ছাত্র হিসেবে তেমন ভালো না হলেও ছেলে হিসেবে অতুলনীয় ছিল। বড়দের প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ ছিল অন্যদের চেয়ে আলাদা।’
এক শোক বার্তায় হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. আবু জাহির বলেন, ‘সুবীর নন্দী ছিলেন হবিগঞ্জ জেলার গর্ব। তাঁর মৃত্যুতে হবিগঞ্জের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। হবিগঞ্জবাসী যখন আমাকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য সর্বদলীয় নাগরিক সংবর্ধনা দেয়, সেখানেও তিনি অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে আমার কর্মকাণ্ডের প্রসংশা করেছিলেন। আমি তাঁর প্রসংসায় উজ্জীবিত হয়েছিলাম। আমি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’
উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল মৌলভীবাজারে তাঁর এক আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুবীর নন্দী। পরে তাকে সংকটাপন্ন অবস্থায় সিএমএইচে নেওয়া হয়। ৩০ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসার জন্য সুবীর নন্দীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। সেখানে ৭ মে (মঙ্গলবার) তিনি পরলোক গমন করেন।