৩০ মণ ধানের মূল্য ২০ হাজার টাকা!

ঝিনাইদহ, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঝিনাইদহ | 2023-08-23 00:21:00

বৈশাখের তাপদাহ ও প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে সোনালি ধান ঘরে তুলছে ঝিনাইদহের ৬ উপজেলার কৃষকরা। জমি থেকে ধান কাটা, কাটা ধান বাঁধা, মাড়াই করতে ব্যস্ত তারা। তবে হাসি নেই কৃষকের মুখে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হলেও দাম না পাওয়ায় মলিন কৃষকের মুখ। কোনো জমিতে চাষের খরচের টাকা উঠছে, আর কোনো জমিতে লোকসান থেকে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, এ বছর জেলার ৬ উপজেলার ৮৮ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৩ হাজার ৪৪ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৬ হাজার ১৩০ হেক্টর, মহেশপুরে ২০ হাজার ৩৭০ হেক্টর, শৈলকুপায় ১৪ হাজার ৮৭০ হেক্টর ও হরিণাকুণ্ডুতে ৯ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও পরিমিত সারের ব্যবহারের কারণে এ বছর বোরো আবাদে এলাকার কৃষকরা ভালো ফলন পেয়েছে। গত মাসের ১ম সপ্তাহে শুরু হয়েছে ধান কাটা। ইতোমধ্যে জেলার ৬ উপজেলায় প্রায় ৭০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ধান ধরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।

সদর উপজেলার চুটলিয়া গ্রামের কৃষক ওমর আলী জানান, এ বছর তিনি ৩ বিঘা জমিতে সুবল লতা ধানের আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৩০ মণ ধান উৎপাদন হবে। কিন্তু ৭শ টাকা মণে ধান বিক্রি করে তাদের লাভ হচ্ছে না।

ক্ষোভ নিয়ে তিনি জানান, এ বছর ধান চাষ করে কোনো লাভ হয়নি।

একই গ্রামের কৃষক আবু কালাম জানান, এ বছর প্রতি বিঘা বোরো ধান আবাদ করতে সেচ খরচ ৪ হাজার টাকা, সার খরচ ৪ হাজার টাকা, পরিচর্যা ৩ হাজার টাকা, ধান কেটে ঘরে তুলতে শ্রমিক খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এ বিঘায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর ৩০ মণ ধান বাজারে বিক্রি করে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।

মহেশপুর উপজেলার নাটিমা গ্রামের কৃষক দাউদ হোসেন জানান, জমিতে এবার ধানের ফলন গত কয়েক বছরের চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে সব জিনিসের দাম বেশি হবার কারণে শ্রমিকের দামও বেড়ে গেছে। ফলে ধানের ন্যায্য মূল্য না পেলে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে। এখন ধান ৭শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণ ধান ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে পারলে কৃষক লাভের মুখ দেখবে।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জি এম আব্দুর রউফ জানান, গত বছর জেলার ৬ উপজেলায় হেক্টর প্রতি ৪.৩০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এ বছর তা বেড়ে ৪.৩৫ মেট্রিক টনে দাঁড়াবে। তবে কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে।

তিনি আরও জানান, যেহেতু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে, সে ক্ষেত্রে ধান উৎপাদনে খরচ কমিয়ে আনার ব্যাপারে কৃষকদের নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনলে দাম যাই হোক না কেন কৃষক লোকসানের সম্মুখীন হবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর