বাড়ির ভিটে বেচে জামাইকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দিয়ে মেয়ের সুখ কিনেছি, হায়রে কপাল। ওরা আমার মেয়েটাকে বাঁচতে দিল না। মেয়ে শ্যামলা ছিল, জামাইয়ের পছন্দ ছিল না। শনিবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে এমনই আহাজারি করলেন নীলা আক্তার নীপার রিকশা চালক দরিদ্র বাবা নুর জামাল।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কাটেঙ্গা গ্রামের নীলা আক্তার নীপা নামের (১৯) এক গৃহবধূকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ করেছেন নিহত গৃহবধূর স্বজনেরা। অবশ্য, পুলিশ বিষয়টি ধামা চাপা দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও তাদের অভিযোগ। এদিকে, পুলিশ এটিকে হত্যা নয়, আত্মহত্যা বলে দাবি করছেন।
নিহত গৃহবধূ নীলার বাবা দরিদ্র রিকশা চালক নুর জামাল জানান, দেড় বছর আগে মেয়ে নীলার সাথে রিপনের বিয়ে হয়। বিয়ের যৌতুক হিসেবে ৭ লাখ টাকা দিয়ে জামাই রিপনকে সেনাবাহিনীতে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।
নুর জামাল বলেন, ‘মেয়ের গায়ের রং শ্যামলা হওয়ায় বিয়ের পর থেকেই জামাই মেয়ের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। শনিবার দুপুরে স্বামী রিপন, শ্বশুর শাহ আলম এবং শাশুড়ি আঞ্জুয়ারা পরিকল্পিতভাবে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর আত্মহত্যা বলেও গুজব ছড়ান তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আত্মহত্যা প্রমাণে তারা দ্রুত মেয়েকে নিয়ে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। কিন্তু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আগেই মারা গেছে এমন তথ্য জানালে হাসপাতাল থেকে রিপন তার বাবা ও মাকে নিয়ে পালিয়ে যান।’
নীলার দাদা হাসান আলী মোল্লা জানান, ‘নুর জামাল বাবার থেকে প্রাপ্ত পৈত্রিকভিটা বিক্রি করে মেয়ের সুখের জন্য জামাইকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, নীলা আত্মহত্যা করেছে এমন খবর পাওয়ার পর আমরা ওই বাড়িতে যাই। কিন্তু যে স্থানের কথা বলা হয়েছে, সেখানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করার কোন ধরণের ব্যবস্থা নেই।’
হাসান মোল্লা জানান, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জেনেছি, তারা ঘটনার সময়ে ওই বাড়িতে চ্যাঁচামেচির শব্দ শুনতে পেরেছেন। ১৪/১৫ দিন আগে রিপন ছুটিতে বাড়িতে এসেছে। বাড়ি আসার পর থেকেই অশান্তি শুরু হয়েছে বলে স্থানীয়রা নিহত নীলার পরিবারকে জানিয়েছে।
প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে নীলার বাবা নুর জামাল বলেন, ‘মেয়ে বিয়ে দেয়ার পর থেকেই শুনেছি ছেলের বউ পছন্দ হয়নি। তার সাথে অন্য কোনো মেয়ের সম্পর্ক রয়েছে। ছুটিতে আসলেও অধিকাংশ সময়ে সে বাড়ির বাইরেই অবস্থান করতেন।’
প্রতিবেশীরা জানান, রিপন সেনাবাহিনীতে চাকরি করলেও বিয়ের কোনো অনুমতি না নিয়ে গোপনেই সে বিয়ে করেছেন।
নুর জামাল বলেন, ‘আমি আমার মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। জামাই রিপন, তার বাবা ও মা আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাসির উদ্দিন শনিবার বলেন, ‘খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করেছি। শুনেছি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে কেন কি জন্য আত্মহত্যা করেছে তা জানিনা।’
ওসি নাসির বলেন, ‘অভিযোগ পাইনি। মামলা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।’