সরকারের ক্রয়নীতি ঘোষণার পরও ধানের দাম বাড়েনি। এ কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মোকামে ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে কৃষকরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ইরি-বোরো মৌসুমে চাষাবাদ থেকে বিরত থাকবে অনেক কৃষক।
সরেজমিনে আশুগঞ্জ ধানের মোকামে গিয়ে জানা যায়, বৃহত্তর হাওরাঞ্চল কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান আশুগঞ্জ মোকামে আসে। আর এসব ধান স্থানীয় ৪ শতাধিক রাইস মিলে প্রক্রিয়াজাত করে চাল বানানো হয়। পরে সেই চাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও নৌ পথে সরবরাহ করা হয়।
চলতি ইরি-বোরো মৌসুমের হাজার হাজার মণ নতুন ধান ইতোমধ্যেই আশুগঞ্জ মোকামে আসতে শুরু করেছে। তবে শিলাবৃষ্টি ও সেচের অভাবে এবার জমিতে ফলন কম হয়েছে। পাশাপাশি ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় আশুগঞ্জ মোকামে ধান আসছে অনেক কম। জমিতে চাষাবাদ করে যে টাকা খরচ হয়েছে, সে টাকার ধান জমিতে হয়নি। এ জন্য অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক ধান এসেছে বাজারে।
কৃষকরা বলছে, মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে জমিতে চাষাবাদ করেছে তারা। চলতি বছরে শ্রমিক সংকট, মজুরি বৃদ্ধিসহ মালামালের দাম বেশি থাকায় উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ৮শ থেকে সাড়ে ৮শ টাকা। কিন্তু বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা। এতে করে উৎপাদন খরচ উঠছে না। প্রতি মণ ধানে দেড় থেকে দুইশ টাকা লোকসান হচ্ছে।
আশুগঞ্জ ধানের মোকামে প্রতি মণ বি আর ২৮ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬২০ থেকে ৬৩০ টাকা পর্যন্ত। বি আর ২৯ বিক্রি হচ্ছে ৫৭০ টাকা। মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকা। এছাড়া প্রতি মণ ভেজা ধান ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সিলেট থেকে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক হাজী আবু তাহের বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রতি মণ ধানে দেড়শ থেকে ২শ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই অল্প কিছু ধান বিক্রি করেছি।’
সুনামগঞ্জ থেকে ধান নিয়ে আসা আরেক কৃষক রমজান মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আর ধান চাষ করব না। যেভাবে ধানের দাম কমছে তাতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।’
তবে মিল মালিকরা বলেছে, বিগত বছরে আমন ধানের ফলন ভালো হওয়াতে অনেক মিলেই পুরনো ধান ও চাল অবিক্রিত রয়েছে। তাছাড়া নতুন ধান ভিজা থাকার কারণে চাল উৎপাদন কম হচ্ছে। এ কারণে নতুন ধানের চাহিদা কম রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাতালকল ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াদুল্লাহ বার্তা২৪.কমকে জানান, চলতি মৌসুমে হাওরে শিলাবৃষ্টি ও চিটার কারণে ধানের ফলন কম হয়েছে। এ জন্য আশুগঞ্জ মোকামে ধান আসছে কম। সেই সঙ্গে চাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ধান ও চাল মজুদ রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয় করছে কম। তবে সরকার যদি রপ্তানির অনুমতি দিত তাহলে চালের দাম বেড়ে যেত। এতে কৃষকরাও ধানের ন্যায্য মূল্য পেত।