সাতক্ষীরায় এক সপ্তাহে ১৬ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ৮ মে থেকে ১৪ মে তারিখের মধ্যে পৃথক ঘটনায় জেলার বিভিন্নস্থানে এসব লোক মারা যায়।
মৃতদের এর মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন পাঁচজন। সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুইজন, বিএসএফ এর হাতে, চারতলা ভবন থেকে পড়ে ও বজ্রপাতে একজন করে মারা যায়। দুই নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত একজনের মরদেহ উদ্ধারেরও ঘটনা ঘটেছে। জেলা পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, মঙ্গলবার (১৪ মে) জেলার কালিগঞ্জে থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কালিগঞ্জের ইছামতি নদী সংলগ্ন একটি মৎস্য ঘের থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার শুইলপুর এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তার আনুমানিক বয়স ৪০ বছর।
একই দিন জেলার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় থ্রি-হুইলার ও যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যুঞ্জয় বাছাড় (৩৪) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এসময় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন। নিহত মৃত্যুঞ্জয় বাছাড় (৩৪) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গাভা গ্রামের নরেন্দ্রনাথ বাছাড়ের ছেলে।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার (১৪ মে) জেলার কালিগঞ্জে কাঁঠাল পাড়তে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দাউদ আলী মোড়ল (৪৫) নামে এক কৃষক মারা যান। তিনি উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের কুশুলিয়া গ্রামের মোহাম্মদ শহর আলী মোড়লের ছেলে।
একইদিন (১৪ মে) বিকালে আশাশুনিতে বজ্রপাতে বুধহাটা ইউনিয়নের শ্বেতপুর গ্রামের আমিনুর গাজীর কন্যা ও বুধহাটা বিপিএম কলেজিয়েট স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী আসমা খাতুন(১৪) নিহত হন।
এদিন রাতে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কে ট্রাক খাদে পড়ে মফিজুল ইসলাম (৫০) নামে ট্রাকচালক নিহত হয়েছেন। তিনি শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেকী গ্রামের আলি গাইনের ছেলে।
এর আগে সোমবার (১৩ মে) জেলার আশাশুনিতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ওসিয়ার রহমানের মেয়ে ও এক সন্তানের জননী তানিয়া খাতুন (২৫)। একই দিন আশাশুনির আনুলিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বাবুল্লা সরদারের ছেলে লাভলু সরদার (৩২) মারা যায়।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, রবিবার (১২ মে) শ্যামনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় বেগম মমতাজ ওয়াহেদ (৫৫) নামে এক স্কুল শিক্ষিকা আহত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। নিহত মমতাজ ওয়াহেদ উপজেলা সদরে সরকারি শিশু শিক্ষা নিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
এদিকে একই দিন (১২ মে) কালিগঞ্জে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে রিনা পারভীন (২০) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেন। তিনি উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের ঠেকরা গ্রামের সোহরাব হোসেনের স্ত্রী এবং দেবহাটা উপজেলার বহেরা গ্রামের গোলাম রসুলের মেয়ে।
এদিকে সীমান্ত সূত্র জানায়, ভারতের দুবলিতে বিএসএফ’র নির্যাতনে একজন বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত যুবকের নাম কবিরুল ইসলাম (৩২)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের আজিজ মোল্লার ছেলে।
কুশখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শ্যামল জানান, কবিরুল চা পাতা আনতে ভারতে গিয়েছিলেন। বিএসএফ তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে। পরে মুখে পেট্রল ঢেলে দেয়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তার দেহে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এর আগে শনিবার (১১ মে) শ্যামনগরে অষ্টমী মণ্ডল (১৪) নামের এক স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের আবাদ চন্ডিপুর মায়ের বাড়ি গ্রামের বিমল মন্ডলের মেয়ে অষ্টমী মন্ডল। তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
একই (১১ মে) দিন শহরের রাজারবাগান কলেজ মোড় এলাকায় নির্মাণাধীন চারতলা ভবন থেকে পড়ে নাজমুল হাসান (২৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তিনি সদর উপজেলার শিমুলবাড়িয়া গ্রামের ওবেদ আলীর ছেলে।
এদিকে তিন বছর আগে ২০১৬ সালে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত শুক্রবার (১০ মে) তালা উপজেলার খেশরা মেশারডাংগা গ্রামের কার্তিক ব্যানার্জীর স্ত্রী নমীতা ব্যানার্জী মৃত্যুবরণ করেন বলে জানায় দায়িত্বশীল সূত্র।
একই (১০ মে) দিন কলারোয়ায় ইবাদুল ইসলাম (৫৫) নামে এক ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করেন। তিনি উপজেলার বিক্রমপুর গ্রামের জবেদ আলী মোড়লের ছেলে।
একই দিন কালিগঞ্জে আফরোজা খাতুন (২৪) নামে দুই সন্তানের জননীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার নলতা ইউনিয়নের পশ্চিম পাইকাড়া গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী এবং ওই ইউনিয়নের বামনের চক গ্রামের মোহাম্মদ রাশেদ আলীর মেয়ে।
এর আগে ৮ মে রাতে কলারোয়ায় ইবাদুল ইসলাম (৫৫) নামে এক ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করেন। তিনি উপজেলার বিক্রমপুর গ্রামের জবেদ আলী মোড়লের ছেলে।
প্রত্যেকটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।