ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত ফারাক্কা ব্যারেজের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। ওই বছর থেকেই ব্যারাজের মাধ্যমে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করে ভারত। ফারাক্কার বিরুদ্ধে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মজলুম নেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী'র নেতৃত্বে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ করা হয়। সেই থেকে ১৬ মে ফারাক্কা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ফারাক্কার প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মাসহ চার নদীই এখন মৃতপ্রায়। স্থানীয়রা বলছেন, নদীতে এখন পানির প্রবাহ নির্ভর করে ভারতের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। শুষ্ক মৌসুমে পানি পাওয়া যায়না, আবার বর্ষায় হঠাৎ পানি ছেড়ে দিলে বন্যা এবং নদী ভাঙন দেখা দেয়। এদিকে পরিবেশবাদীরা বলছেন, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় জীব-বৈচিত্রের ওপর মারত্মকভাবে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
পদ্মার চরের বাসিন্দারা জানান, ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণের আগে, পদ্মায় ছিল থৈ থৈ পানি। ব্যারেজ নির্মাণের পর পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। এখন ভারতের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে পদ্মার পানি প্রবাহের মাত্রা। শুষ্ক মৌসুমে কখনো কখনো নৌকাও চালানো যায়না এই নদীতে।
তাদের অভিযোগ, পদ্মার চর এলাকায় ইরি ধান, ভুট্টা, কলা, পটলসহ বিভিন্ন ফসল রয়েছে। কিন্তু যথা সময়ে পানি দিতে না পারায় কাঙ্খিত ফসল উৎপাদন নিয়ে সংশয় রয়েছে তাদের।
‘সেভ দ্য ন্যাচার’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ’র প্রধান সমন্বয়কারী রবিউল হাসান ডলার জানান, স্থানীয় পরিবেশবাদীদের মতে পদ্মায় পানি না থাকায় পরিবেশের উপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উদ্ভিদ ও জীবচক্র। বিশেষ করে শুশুক ও ঘড়িয়ালের প্রজননস্থল পদ্মা নদী হওয়ায় এই প্রাণীদুটি হুমকির মুখে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাহেদুল আলম বলেন, ‘ফারাক্কা ব্যারেজের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মাসহ অন্য তিন নদী মহানন্দা, পাগলা ও পূণর্ভবা শুকিয়ে যাচ্ছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা জানালেন, ব্যারেজ নির্মাণের পর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। এখন প্রয়োজনীয় পানি পেলেও তা ধরে রাখা যায় না। আর ফারাক্কা ব্যারেজের দরজা হঠাৎ খুলে দেয়ার কারণে বন্যা ও নদী ভাঙন প্রবণতা বাড়ছে।