সিলেট অঞ্চলের মানুষের কাছে খিচুড়ি একটি জনপ্রিয় খাবার। যেকোনো দিন সময়ে অসময়ে খিচুড়ি খেতে পছন্দ করে এ অঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে বৃষ্টির দিন হলে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই খিচুড়ি রান্না হয়ে থাকে।
এছাড়া পবিত্র রমজান মাসেও খিচুড়ির কদর বাড়ে। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে ধনাঢ্য পরিবারগুলোতে ইফতারের অন্যতম আইটেম এই খিচুড়ি। বিশেষ করে বিত্তশালীরা যখন একেক দিন একেক ধরনের ইফতারের ব্যবস্থা রাখে, সেখানে মধ্যবিত্তরা প্রতিদিনই এই খিচুড়ি দিয়ে ইফতার করে থাকে।
মধ্যবিত্তদের দাবি, ইফতারে বিত্তবানদের মতো খরচ করার সামর্থ্য না থাকায় কম খরচে সহজ ইফতার আইটেম হচ্ছে খিচুড়ি। তবে মাঝে মাঝে খিচুড়ির সঙ্গে অন্যান্য আইটেমও রাখা হয়।
শুধু পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টেও ইফতারে বিভিন্ন আইটেমের সঙ্গে খিচুড়ি অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। পরিবারগুলোতে সাধারণ চাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করা হলেও হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে থাকে ভিন্নমাত্রা। সুগন্ধি চিকন চালের সঙ্গে গাওয়া ঘি, কালোজিরা ও মেথিসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা দিয়ে খিচুড়ি রান্না হয়। আবার স্বাদে ভিন্নতা আনতে খিচুড়িতে শাক-সবজিও কুচি কুচি করে মেশানো হয়ে থাকে। কেউ কেউ আবার খিচুড়ির সঙ্গে গরু, খাসি বা মুরগির মাংসও মিশিয়ে থাকেন।
কিন্তু শুধুমাত্র ছোলা-মুড়ি দিয়েই প্রতিদিন ইফতার করে থাকে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারগুলো। তবে সময় ও বিশেষ দিন অনুসারে তারাও খিচুড়ির আয়োজন করে থাকে। নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারগুলোর ইফতারে ভালো আইটেম বলতে আলুর চপ, বেগুনি ও শাকের বড়াই রয়েছে।
তাদের দাবি, ইফতারে ছোলা, পেঁয়াজু, ডিমের চপ, আলুর চপ, বেগুনি, বাখরখানি, শাকের বড়ার মতো নানা বাহারি আইটেম বাজারে থাকলেও কেনার সামর্থ্য হয় না। আবার বাড়িতে তৈরি করতে হলে নানা উপকরণের প্রয়োজন হয়। যা কেনার সাধ্য তাদের থাকে না। তাই ছোলা, মুড়ি, আর পেঁয়াজু মাখিয়ে ইফতার করেন তারা। পরে পেট ভরে ভাত খেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।
হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ইফতারিতে নরম খিচুড়ি বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় আবার রোজাদারদের চাহিদা অনুযায়ী ভুনা খিচুড়িও বিক্রি হচ্ছে। যদিও হোটেল-রেস্টুরেন্টে খিচুড়ির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি বলে দাবি করেছে অনেকে। প্রতিটি স্থানেই নির্দিষ্ট সাইজের প্লেট অনুসারে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি করা হয় সুস্বাদু এই খিচুড়ি।
শহরের শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য ইফতারে খিচুড়ি একটি অনন্য উপাদান। এর স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। প্রতিদিনই আমার বাসায় ইফতারে খিচুড়ির আয়োজন করা হয়। একেক দিন একেক স্বাদের খিচুড়ি তৈরি করা হয়।’
মনোয়ার আলী নামে এক রোজাদার বলেন, ‘গ্রামের বাড়ি থেকে মা কিছু বিন্নি চাল পাঠিয়েছিলেন। এগুলো দিয়ে খিচুড়ির স্বাদই অন্যরকম। ইফতারে খিচুড়ি না থাকলে ভালো লাগে না।’
রিকশাচালক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘আমাদের ইফতারের সময় একটা কিছু খেলেই হলো। রোজা ভাঙার জন্য একটি খেজুর ও ১০ টাকা দিয়ে ফুটপাতে বিক্রি করা মুড়ি খাই। এরপর পানি খেয়ে আবার রিকশা চালাই। রাতে বাড়িতে গিয়ে পেট ভরে ভাত খাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পছন্দ-অপছন্দ দিয়ে ইফতার করার টাকা কই পামু। সারা দিনে একশ টাকা ইনকাম করতে পারি না। আর একশ টাকা দিয়ে খিচুড়ি খাইমু কীভাবে?’
এদিকে, ইফতারিতে নরম খিচুড়ি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।