দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজ (ডালিয়া) সেচ প্রকল্পের আওতায় নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর আগাম বৃষ্টি বা নদীতে ভারতীয় পানির ঢল না আসায় কোনো ঝামেলা ছাড়াই ধান ঘরে তোলা যাবে বলে আশা করছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। আগাম জাতের ধান কাটা ও মাড়াই করার কাজ কেবল শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নীলফামারী সদর উপজেলার সাইফন এলাকায় তিস্তার প্রধান সেচ খালের পাশ্ববর্তী সড়কে অনেক কৃষক ধান মাড়াই করছেন। আবার অনেকে জমি থেকে ধান নিয়ে আসছেন।
ওই এলাকার কৃষক তাফিউল আলম বার্তা২৪.কমকে জানান, বিআর-২৮ জাতের ধানে প্রতি বিঘায় ২৫-২৮ মণ পর্যন্ত ধান পেয়েছেন। তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় তারা পর্যাপ্ত সেচের পানি পাওয়ায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
জলঢাকা উপজেলার চাওড়াডাঙ্গী গ্রামের কৃষক প্রেমচরন রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে ক্যানেলের পানি দিয়ে আবাদ করেছি। বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র বা ডিজেলচালিত পাম্পের মালিক বিঘাপ্রতি খরচ নেয় দুই হাজার ৪০০ টাকা। আমার দুই বিঘা জমিতে খরচ হতো চার হাজার ৮০০ টাকা। সেখানে ক্যানেলের সেচে আমাকে দিতে হয়েছে দুই বিঘায় ৩০০ টাকা।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ডালিয়া ডিভিশনের সেচ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এবার রংপুর কৃষি অঞ্চলের তিন জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯ হাজার হেক্টর। তিস্তা ব্যারেজের সেচ কমান্ড এলাকায় নীলফামারী সদর, জলঢাকা, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর, রংপুর সদর, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর, পাবর্তীপুর ও খানসামা উপজেলাসহ ১২টি উপজেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার প্রস্ততি থাকলেও পরবর্তীতে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের মাধ্যমে বোরো আবাদ করা হয়।’
পাউবোর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বার্তা২৪.কমকে জানান, বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রে এক হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করতে সেচ খরচ হয় ১০ হাজার ৫০০ টাকা। আবার ডিজেল চালিত সেচ পাম্পে এক হেক্টর জমিতে বোরো চাষে কৃষকের খরচ হয় প্রায় ১৪ হাজার টাকা। অপরদিকে, তিস্তা ব্যারাজের আওতায় (কমান্ড এলাকায়) এক হেক্টর জমিতে কৃষকের খরচ হয় মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা।
তিনি আরও জানান, বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত পাম্পের সেচে এক হেক্টরে কৃষক ধান ফলায় গড়ে ৫ দশমিক ৪ মেট্রিক টন। সেচ ক্যানেলে কৃষক প্রতি হেক্টরে ধান উৎপাদন করছে ৬ মেট্রিক টন। এতে ব্যারাজ কমান্ড এলাকায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে তিস্তার সেচে ধান উৎপাদন হবে ১১৯ কোটি টাকার।