দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লোনা পানিতে গলদা চিংড়ির চাষ হলেও এবার কুড়িগ্রামে মিঠা পানিতে এ মাছের চাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে। কুড়িগ্রামের মৎস বীজ উৎপাদন খামারে গত তিন বছর ধরে এ মাছ চাষ করা হচ্ছে। প্রতি বছর বাড়ছে চিংড়ির রেনু-পোনা উৎপাদন।
লোনা ও মিঠা পানির প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে মা মাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে তা থেকে রেনু ও পোনা তৈরি করে পুকুর ও ধানি জমিতেই কার্প জাতীয় মাছের সাথে চাষ করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক মুসা কালিমুল্ল্যা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণের জন্য ২০১৭ সাল থেকে কাজ শুরু করা হয়। ওই বছরে গলদা চিংড়ির চাষে সফলতা পাওয়ায় এবছর পুরোদমে শুরু করা হয়েছে রেনু ও পোনা উৎপাদনের কার্যক্রম।’
তিনি আরও বলেন, ‘পেকুয়া কক্সবাজার থেকে ব্রাইন ওয়াটার সংগ্রহ করা হয়। এরপর বরগুনার পায়রা নদীর আমতলী থেকে মা চিংড়ি নিয়ে আসা হয়। মা চিংড়িকে বিশেষভাবে রেখে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেখান থেকে লার্ভা সংগ্রহ করা হয় এবং বিশেষভাবে তা সংরক্ষণ করা হয়। তারপর এ লার্ভা তার জীবন চক্রের ১১টি স্তরে খোলস পাল্টিয়ে ২৮-৩২ দিনে বিশেষ প্রক্রিয়া জাতের মাধ্যমে মিঠা পানির উপযোগী করে রেনুতে পরিণত করে তা মাছ চাষিদের কাছে বিক্রি করা হয়।’
মুসা কালিমুল্ল্যা বলেন, ‘গলদা চাষ সহজলভ্য করতে খামারে সরকারিভাবে রেনু ও পোনা উৎপাদন করে তা মৎস্য চাষিদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে অন্যান্য মাছের সাথে চিংড়ি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।’
সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের মাছ চাষি মো. তারা মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এতদিন পুকুরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করতাম। গত বছর অন্যান্য মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ি চাষ করে সফলতা পেয়েছি। এক খাবারেই পুকুরের সব মাছের খাদ্যের চাহিদা মেটায় খরচ কমেছে।’
উলিপুর উপজেলার মাছ চাষি জাহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মিঠা পানিতে চিংড়ি চাষ আমাদের কাছে স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এখন মৎস বীজ উৎপাদন খামার কুড়িগ্রামে সরকারিভাবে চিংড়ির রেনু ও পোনা উৎপাদন করছে, যা কার্প জাতীয় মাছের সাথে চাষ করা সহজ।’
কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘খামার শুরুর বছর স্বল্প পরিসরে রেনু ও পোনা উৎপাদন করা হলেও গত বছর তিন লাখ উৎপাদন করা হয়েছিল। এ বছর চিংড়ি চাষির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তিন লাখেরও বেশি রেনু পোনা উৎপাদন করা হয়েছে। রফতানিযোগ্য গলদা চিংড়ি চাষ এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবেন এবং কুড়িগ্রামের অর্থনীতিতে যোগ হবে বৈদেশিক মুদ্রা।’