লক্ষ্মীপুরে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। রোববার (১৯ মে) ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত ১২ মে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এর আগে কখনো এতো তাপমাত্রা পোহাতে হয়নি লক্ষ্মীপুরবাসীকে।
এদিকে গত কয়েক বছরে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা ও উপজেলা শহরগুলোতে ব্যাপকহারে দালানকোঠা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যক্তিগত বনায়নের প্রচুর গাছপালা (বৃক্ষ) কাটা হয়েছে। গ্রামের কৃষি জমিগুলোতেও বেড়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি। ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে কৃষি জমিও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত জেলাব্যাপী ১৫ হাজারেরও বেশি গাছ কাটা হয়েছে। সদরের ঢাকা-রায়পুর মহাসড়কের পাশের প্রায় ৫ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। পরিমিত বয়স না হওয়া শর্তেও সড়ক বর্ধিতকরণে ভবানীগঞ্জ চৌরাস্তা-দাসের হাট পর্যন্ত কয়েক হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এভাবে গাছ কাটা হচ্ছে পুরো জেলায়। তবে সড়কের পাশের হাজার হাজার গাছ কাটা হলেও এখনো পর্যন্ত নতুন করে একটি চারাও রোপণ করা হয়নি।
অন্যদিকে কৃষি জমিতে উঁচু উঁচু দালানকোঠা নির্মিত হওয়ায় ভেস্তে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। একই কারণে কাটা হচ্ছে ব্যক্তিগত বাগানের হাজার হাজার ফলজ-বনজ গাছপালা। এর প্রভাবে দিন দিন ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এতে শ্বাসকষ্টসহ মানুষের রোগবালাইও বেড়ে যাচ্ছে। একই কারণে জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে।
সদর উপজেলা বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগরে প্রায় ১৬শ সিড লিংক কিলোমিটার সামাজিক বনায়ন রয়েছে। প্রতি ১ হাজার গাছে এক কিলোমিটার। সড়ক উন্নয়নের কারণে লক্ষ্মীপুরে প্রায় ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-রায়পুর মহাসড়ক বর্ধিতকরণের কারণে সদর উপজেলা এলাকায় প্রায় ৫ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এখনো গাছ কাটা চলছে।
লক্ষ্মীপুরের পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবু জানান, গাছপালা কমে যাওয়ায় লক্ষ্মীপুরে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। এর আগে এতো বেশি তাপমাত্রা এই জেলার মানুষকে পোহাতে হয়নি। অধিক তাপমাত্রা থেকে বাঁচতে বাসার ছাদে কিংবা বাড়িতে বাড়িতে গাছপালা লাগাতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এই নিয়ে তারা খুব শিগগিরই মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বলেও জানান তিনি।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা এএসএম মহি উদ্দিন চৌধুরী জানান, এ জেলায় যথেষ্ট সামাজিক বনায়ন রয়েছে। তবে দালানকোঠার ভিড়ে উজার হয়েছে ব্যক্তিগত বনায়নের প্রচুর গাছ। এতে এই অঞ্চলে তাপমাত্রার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ু। এর থেকে উত্তরণে সামাজিক বনায়নের পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে গাছ লাগাতে হবে। এভাবে বনায়ন বৃদ্ধি পাবে। তাপমাত্রাও স্বাভাবিক থাকবে।