প্রয়াত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লেখা ও ফকির আলমগীরের কণ্ঠে গাওয়া ‘মায়ের এক ধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম- পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না- এমন দরদীভবে কেউ হবে না- আমার মা গো’- কালে কালে গানটির যথার্থতা প্রমাণিত। তেমনি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মানসিক ভারসাম্যহীন মা-ছেলের যাযাবর জীবন কাহিনী এই গানেরই প্রতিফলন।
জানা গেছে, প্রায় দু’বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে আরিফ হোসেন তার মা মমতাজ বেগমকে নিয়ে রাস্তার পাশে থাকেন। তিনি মাঝে মাঝে রিকশা চালিয়ে আয় করেন, আবার ভিক্ষা করেও অন্ন যোগান। স্থানীয়দের সহায়তায় বার্তমানে অসুস্থ ওই মা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
বৃদ্ধা মায়ের নাম মমতাজ বেগম (৭০)। স্বামী মৃত জয়নাল আবেদীন। স্বামীর বাড়ি হাজীগঞ্জ উপজেলার নওহাটা গ্রামে। তাদের এক ছেলে। ছেলের নাম মো. আরিফ হোসেন।
গত শনিবার (১৮ মে) বিকেলে হাজীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী এসএম মিরাজ মুন্সী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মা-ছেলের ওপর ধারণ করা একটি ভিডিও পোস্ট করেন। পরে বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদকর্মী ও পুলিশের দৃষ্টিগোচ হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রোববার (১৯ মে) সকালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, বৃদ্ধা মা এখন অনেকটা সুস্থ। বসে পাউরুটি আর জুস খাচ্ছিলেন।
এসএম মিরাজ মুন্সী ভিডিও চিত্রে উল্লেখ করেন, ‘মায়ের প্রতি পাগল ও বিক্ষুব্ধ ছেলের ভালোবাসা। ভিখারি ছেলের টাকা দিয়ে চলছে মায়ের চিকিৎসা ও খাবার। কোথায় আমাদের মানবতা?’
পরে মা-ছেলের সাহায্যে এগিয়ে আসেন সংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম সিফাত। তিনি ওই ভিডিওর নিচে কমেন্টে লেখেন, ‘মা হলো পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ-কষ্ট জমা রাখি। মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিটির নাম ‘মা’। সেই মা পড়ে আছে রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত আবর্জনার ভাগাড়ে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘গত শনিবার পরিত্যক্ত ডাস্টবিনের পাশে ময়লাযুক্ত কাপড়ে পেঁচানো অবস্থায় ওই মাকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তার শরীরের প্রায় অংশ পঁচে গেছে। কয়েকদিন গোসল না করায় শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তাৎক্ষণিক হাজীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন রনির নির্দেশে উপ-পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন ওই মাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।’
এ বিষয়ে সাংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম সিফাত বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মাথা গোজার ছাদ, খাবার ও ওষুধ পেলে হয়তো ওই মা ও তার ছেলে বেঁচে থাকার শক্তি খুঁজে পাবেন। আমি ও মো. মজিবুর রহমান রনি, জসিম উদ্দিন ও বেলায়েত সুমনসহ আরও অনেকে প্রাথমিকভাবে তাকে সামান্য কিছু সহযোগিতা করেছি।’
সংবাদকর্মী এসএম মিরাজ মুন্সী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আলী নেওয়াজ রোমান ওই মাকে একবার হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি এখনো তার পাশে থাকার চেষ্টা করছেন।’
ভারসাম্যহীন ছেলে আরিফ হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমাগো পরিবারে ধনী লোক আছে, কিন্তু কেউ খবর নেয় না। রাস্তার পাশে মাকে নিয়ে যাযাবর অবস্থায় থাকি। মায়ের জন্য কেউ কিছু করলে আমি খুশি হই।’