বড় কোম্পানিগুলোর লবণ কেনা বন্ধে বিপাকে চাষিরা

কক্সবাজার, দেশের খবর

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 16:26:55

কক্সবাজার থেকে ফিরে: সারাদেশের মোট উৎপাদনের ৬০-৬৫ শতাংশ লবণের চাষ হয় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়। এসিআই সল্ট লিমিটেড, মোল্লা সল্ট, মধুমতিসহ বড় ও নামিদামি কোম্পানিগুলো এখান থেকেই বেশিরভাগ লবণ ক্রয় করেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের আদেশে কিছুদিন যাবৎ কোম্পানিগুলো লবণ কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় দীর্ঘদিনের শ্রমের প্রতিদান পাচ্ছেন না চাষিরা। লবণের ন্যায্য দাম পেতে সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছেন তারা। দাবি তুলেছেন লবণ বোর্ড গঠনেরও।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১৬ লাখ টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও উৎপাদন ইতোমধ্যে ১৮ লাখ টন ছাড়িয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদনের পাশাপাশি কোম্পানিগুলো লবণ কেনা কমিয়ে দেওয়ায় দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। লবণের দরপতনের কারণে ব্যাপক লোকসানের মধ্যে পড়ায় লবণ বিক্রি করছেন না এসব এলাকার চাষিরা।

কক্সবাজারের চকরিয়ার লবণ চাষি আনিসুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমি ২০ কানি জমিতে (এক কানি ৩৯ শতাংশ) লবণ চাষ করি। আগে লবণের ন্যায্য মূল্য ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এখন বড় বড় ফ্যাক্টরি লবণ কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় লবণ বিক্রির জন্য পার্টি পাচ্ছি না। লবণের মূল্য খুবই কম। মাঠে অনেক লবণ রয়ে গেছে। এই লবণ নিয়ে সরকার যদি কোনো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে এই লবণ এখানেই পড়ে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘আমার চার হাজার মণ লবণ মজুদ আছে। রোদের মধ্যে কষ্ট করে চাষিরা যে কষ্ট করে লবণ চাষ করছেন, সরকার উদ্যোগ নিলে তারা পরিশ্রমের টাকাটা পাবেন। সরকার অতিদ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই লবণ বিক্রির জন্য কোনো মানুষ পাওয়া যাবে না।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এ অঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মে মাসের শেষ পর্যন্ত লবণ চাষ করে থাকেন। এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে তা আরও বাড়তে পারে।’

বিসিক সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে দেশে ভোক্তা ও শিল্পখাতে লবণের চাহিদা রয়েছে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। বিপরীতে বিসিক দেশে লবণ উৎপাদন এলাকার ৬৪ হাজার ১৪৭ একর জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৮ লাখ টন। গত বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার সদরসহ কক্সবাজারের উপকূল ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলায় লবণ উৎপাদনে জড়িত রয়েছে প্রায় চার লাখের বেশি কৃষক ও শ্রমিক। অনূকূল আবহাওয়া থাকায় ১৩টি লবণ উৎপাদন মোকামের অধীনে লবণ উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১৮ লাখ টন।

স্থানীয়রা বলছেন, লবণের দাম কম হওয়ায় লাভ তো দূরের কথা খরচ উঠানো যাচ্ছে না। তিন মাস আগে মাঠ থেকে যে লবণ বিক্রি হতো ২৮০ টাকা মণ, সে লবণের দাম এখন অর্ধেকে নেমে ১৫০ টাকা হয়েছে। এ লবণ শিল্প বাঁচাতে হলে সরকারকে বক্সবাজারে একটা ‘লবণ বোর্ড’ গঠন করতে হবে। কৃষকরা যেন ঠিক মতো দাম পান সে ব্যাপারে দেখবে এ বোর্ড।

চকরিয়ার কোটাখালীর লবণ চাষি আবু কালাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এক কানি জমিতে ২৫০ মণ লবণ চাষ হয়। এতে খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকা। জমি তৈরিতে ২৭ হাজার, মাটিতে পলিথিন বিছাতে ১০ হাজার ৫০০ টাকা, জমিতে পানি দিতে তিন হাজার টাকা। নিজের শ্রমের মূল্যসহ আরও খরচ আছে। আর চাষি প্রতি ছয় মাসে দিতে হয় ৬০ হাজার টাকা। আমরা এতো টাকা খরচ করেই লবণ চাষ করি। কিন্তু বড় বড় কোম্পানিগুলো এখন লবণ কিনতে চাচ্ছে না। সরকার যেন আমাদের কথা চিন্তা করে।’

এ বিষয়ে এসিআই সল্ট লিমিটেডের বিসনেস ডিরেক্টর মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের কারখানার জন্য প্রতিদিন প্রায় ছয় লাখ কেজি লবণ সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় আমরা খুচরা বাজার থেকে লবণ কেনা বন্ধ রেখেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে লবণ কেনা চালু করতে পারব।’

সম্প্রতি বিএসটিআই ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি পণ্য নিম্নমানের ও ভেজাল রয়েছে বলে জানানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ রিপোর্ট প্রকাশ করে বিএসটিআই। পরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এই ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এসব পণ্যের মধ্যে ৯টি লবণ কোম্পানিও রয়েছে। সেগুলো হলো- এসিআই, মোল্লা সল্ট, দাদা সুপার, মধুমতি, তীর, মদিনা, স্টারশীপ ও তাজ, নূর স্পেশালের আয়োডিন যুক্ত লবণ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর