রাত্রিকালীন মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রকাশ্যে বসে মাদকের হাট। অনেকটা হাঁকডাক দিয়েই বিক্রি করা হচ্ছে গাঁজা, ফেনসিডিল কিংবা ইয়াবা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেসরকারি মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রহনপুর হতে প্রতিদিন ভোর ৬টায় খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আবার রাত ৯টার দিকে রাজশাহী হতে কাকনহাট হয়ে ভোর সাড়ে ৩টার দিকে রহনপুর স্টেশনে পৌঁছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে,রাতে রাজশাহী হতে ট্রেনটি ছাড়ার পরেই শুরু হয় মাদকের কারবার। পুলিশ ডিউটিতে থাকলেও তাদের দিকে নজর যেন পড়েই না। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই ট্রেনের অন্য যাত্রীরা।
মাদক ব্যবসায়ীরা ট্রেনটিকে নিরাপদ ব্যবসার স্থান হিসেবে বেছে নিয়ে অনেকটা প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের ব্যবসা। ট্রেনের মধ্যে মাদক সেবন করে চিৎকার দিয়ে নোংরামি করে ও অশালীন গান ধরে।
তারা এতটাই বেপরোয়া যে, ট্রেনে থাকা নারী যাত্রীদেরও হয়রানি করে থাকেন। এসবের প্রতিবাদ করলে কপালে জোটে মারধর অথবা অশ্লীল গালি। মারধর ও গালির ভয়ে কেও প্রতিবাদ করা সাহস পায়না।
কাকন পৌর এলাকার বাউপুর গ্রামের সিফাতুর রহমান নামে এক মাদকসেবী জানান, আমরা রাজশাহী শহরে রিকশা চালাই। প্রতিদিন ৩০-৪০ জন রাত করে বাসায় ফিরি। সারাদিনের ক্লান্তি কাটাতে একটু খানি ছাইপাঁশ খেয়ে দেহের ক্লান্তি দূর করি।
একই কথা বলেন তার সহযোগী আব্বাস উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘সারাদিন কাজ করার পরে একটি বাবা (ইয়াবা) খেলে ক্লান্তি দুর হয়। সে জন্যই ভাগযোগে টাকা দিয়ে ইয়াবা সেবন করি।’
আমনুরার বাদাম বিক্রেতা দুলাল জানান, ‘কিছু করার নেই, এরা সংখ্যায় অনেক, ওদের সঙ্গে পেরে উঠিনা। তারা দলবদ্ধভাবে কোর্ট থেকে ট্রেনে উঠে আর নানা ধরণের নেশা করে এমন মাতলামি করে। এদের বিরুদ্ধে লেগে কিছু হবেনা।’
নাচোল বাজারের এক কাপড় ব্যবসায়ী ট্রেনের যাত্রী মুখে কাপড় বেঁধে (গাঁজার গন্ধ থেকে বাঁচতে) জানান, আমি মাঝে মাঝে এই ট্রেনে যাতায়াত করি, আর এমন দৃশ্য প্রতিবারই দেখি। প্রতিবাদ করে কোন লাভ হয়নি। উল্টো হয়রানিতে পড়তে হয়েছে।
মহানন্দা ট্রেনের টিকিট চেকার নীলফামারীর নুরুন্নবী জানান, ট্রেনের মধ্যে মাদক বিক্রি ও সেবনের চিত্র প্রতিদিনেরই। যাদের দেখার কথা তারা (পুলিশ) দেখেননা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সুপারেনটেন্ডেন্ট আবদুল করিম কোন মন্তব্য না করে রাজশাহী জিআরপি পুলিশের ওসির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এদিকে, বক্তব্য জানতে রাজশাহী জিআরপি থানা পুলিশের ওসি সাইদ ইকবালের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ট্রেনে মাদক সেবন ও বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাত হতেই অভিযান শুরু করেছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যেই ট্রেনে মাদকের কারবার বন্ধ হয়ে যাবে।