রাজবাড়ী শহরের প্রাণকেন্দ্রে ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতেই হাতের বাম পাশে চোখে পড়বে দেড়শ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের লাল ভবন। কালের আবর্তনে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আসলেও সেই ছোঁয়া লাগেনি এই লাল ভবনে। ফলে ভবনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনও একই রূপে দাঁড়িয়ে আছে।
ভবনটির সাথে জড়িয়ে রয়েছে রাজবাড়ীবাসীর সুখ-দুখের স্মৃতি। কিন্তু হঠাৎ করে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন ভবনটি ভেঙে সেখানে নতুন ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে এলাকাবসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাই ভবনটি রক্ষা করতে তারা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব। এমনকি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত না বদলালে আত্মাহুতির হুমকিও দিয়েছন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
ইতোমধ্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অধ্যাপক মনসুর উল করিমকে সমন্বয়ক করে ‘ঐতিহ্য সংরক্ষণ আন্দোলন রাজবাড়ী’ নামে একটি সংগঠনও গড়ে উঠেছে। অধ্যাপক মনসুর উল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বৃহত্তর ফরিদপুরের মধ্যে এটিই প্রথম মাধ্যমিক পর্যাযের বিদ্যালয়। সেক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এটি অনেক গুরুত্ব বহন করে। তাছাড়া রাজবাড়ীবাসীর ইতিহাস আর ঐতিহ্য বহন করে আসছে এই ভবনটি। এই ভবনটির সাথে জড়িয়ে আছে এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখ।’
তিনি বলেন, ‘নতুন ভবন তৈরির নামে পুরাতন ঐতিহ্যবাহী ভবন ভেঙে ফেলা অযৌক্তিক। আমরাও চাই রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেটি আমাদের গর্ব, ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধ্বংস করে নয়। কারণ বিদ্যালয়ের জায়গার কোনো অভাব নেই। আমরা চাই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটি সংরক্ষণ করুক।’
‘আমরা চাই কর্তৃপক্ষ তাদের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুক। তা না হলে আমরা রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলবো। আর এটি হবে আমাদের নিজেদের অস্থিত্ব রক্ষার আন্দোলন। নতুন প্রজন্মের মাঝে কালের স্বাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকুক ভবনটি।’
রাজবাড়ীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আলমগীর হুসাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো মুহূর্তে ধসে যেতে পারে এবং বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেই প্রেক্ষিতে ভবনটির বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরকে অবগত করেছি। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সবাইকে আন্দোলন থেকে সরে আসা উচিৎ।’
প্রসঙ্গত, ১৮৭১ সালে মাইনর স্কুল দিয়ে এটির যাত্রা শুরু হয়। ১৮৯২ সালে তা পূর্ণরূপ পায়। সেবছর তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার বাণীবহ এস্টেটের জমিদার গিরিজা শংকর মজুমদার ও অভয় শংকর মজুমদার রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দা মৌজায় দি গোয়ালন্দ ইংলিশ হাই স্কুল নাম দিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে নাম পরিবর্তন করে গোয়ালন্দ মডেল হাই স্কুল এবং সর্বশেষ রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়।
কয়েক বছর আগেও কর্তৃপক্ষ এই লাল ভবনটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়, কিন্তু তীব্র আন্দোলনের মুখে তখন ভবনটি রক্ষা পায়। সর্বশেষ ৯ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সেটি ফের ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর তাতেই ফুঁসে উঠেছে রাজবাড়ীবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন রাজপথে এসে নেমেছে।