সাগরে মাছ ধরার সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাতিল চান ভোলার জেলেরা। দুই মাস মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার অভয়াশ্রমে মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর ২০ দিনের মাথায় আবারও সাগরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। একে অযৌক্তিক ও অন্যায় দাবি করে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জেলে ও জেলে সমিতির নেতারা।
তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্ত, সুতরাং জেলেদের এটি মেনে চলতে হবে। যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সামুদ্রিক মাছের নির্বিঘ্ন প্রজনন এবং উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য সরকার ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই সাগরে সকল প্রকার মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে ইলিশ শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভোলার লক্ষাধিক জেলে। বর্তমানে অলস সময় পার করছেন এখানকার জেলেরা।
জেলেরা জানায়, ইলিশের প্রজনন মৌসুম কিংবা বেড়ে ওঠার সময় এখন নয়। আশ্বিন বা অক্টোবর মাস ইলিশের প্রজনন মৌসুম। তখন তারা সরকারের নির্দেশে ২২ দিন ইলিশ শিকার করেনি। পরবর্তীতে ইলিশের বেড়ে উঠার সময় মার্চ-এপ্রিল দুই মাসও তারা ইলিশ শিকারে নদীতে নামেনি।
নিয়মানুযায়ী মে-জুন ইলিশ শিকারের মৌসুম শুরু এবং নদীতে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার মাত্র ২০দিনের মাথায় আবার সাগরে ইলিশ শিকারে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। সামুদ্রিক মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে ভোলা জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির খন্দকার বলেন, যারা বড় ইলিশ শিকার করে তাদের জন্য সাগরে নামার অনুমতি চায় জেলেরা।
জেলেরা বলছেন, এ বছর তারা এমনিতেই তেমন ইলিশ পাননি। এখন নদীতে ইলিশ নেই, আছে সাগরে। যদি সাগরেও ইলিশ শিকার করতে না পারে তাহলে চরম লোকসানের মুখে পড়বেন তারা।
দৌলতখান লঞ্চঘাটের জেলে নৌকার মাঝি মোশারেফ বলেন, ‘এই যে অভিযান দিছে আর অন আমাগো সব বোট ঘাটে বান্ধা আছে। আমরা অন সাগরে জাল বাইতে যাইতে পারি না। কিভাবে ব্যবসা বাণিজ্য চলব।’
আরেক জেলে নসু মিয়া বলেন, আমাদেরকে আবারও ৬৫ দিনের অভিযান দিছে, এটা কিন্তু হয় না। এখন আমরা না খাইয়া বহুৎ কষ্টে দিন কাটাইতেছি।
একই কথা জানান, জেলে মনজুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা তো কুচা-কাঁচা মাছ ধরি না, আমরা বড় ইলিশ মাছ ধরি। বড় ইলিশ না ধরলে কি কইরা খামু? তাইলে আমাগরে সরকার একটা কাজ করার ব্যবস্থা কইরা দেউক।’
এদিকে ইলিশ ব্যবসায়ী ইসরাফিল বলেন, এ বছর নদীতে মাছ খুব কম পাওয়া গেছে, আমরা মনে করি অভিযানটা না অওনই ভালো। আমরা অভিযান চাই না,বন্ধ করতে চাই।
জানতে চাইলে ভোলার ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ বলেন, ‘সমুদ্রে ট্রলিং জাহাজওয়ালারা যারা অবৈধ ছোট-খাটো ইলিশের বাচ্চা মারে তাদেরকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নিয়া আমাগরে ইলিশ ধরার সুযোগ দেউক সরকার। আর নাইলে আমাগো জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করুক।’
এ বিষয়ে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জেলেরা যাতে বিষয়টি মেনে নিয়ে কাজ করে সেজন্য ব্যাপক প্রচারণা এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমরা আশা করি জেলেরা সরকারের এ সিদ্ধান্তটি আন্তরিকভাবে মেনে নেবেন। সমুদ্রে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকবেন। আমরা মনিটরিং করব যেন জেলেরা সাগরে না যায়। যারা সাগরে যাবে তারা সাগর থেকে মাছ এনে কোনো না কোনো ঘাটে বা আড়তে আসবেন। আমরা সেখানে গিয়ে তাদের আটক করব এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
উল্লেখ্য, এ বছর ভোলা থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সাগরে ৬৫ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় অন্তত ৪০ লাখ ইলিশ এবার কম পাওয়া যাবে।