‘মরার পরেও শান্তি নাই গরিবের’

মানিকগঞ্জ, দেশের খবর

খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ | 2023-09-01 23:03:45

‘নাতনি দুইডারে নিয়া একটু ভালো থাকার লাইগ্যা কাজের সন্ধানে মানিকগঞ্জে আইলো মেয়েডা (ছেলের বউ)। বড় নাতনিডারে ভালো একটা স্কুলেও ভর্তি করল। আর ছোট নাতনিডারে নিয়া ভাড়া বাসায় থাকতাম আমি। ঘরে বাইরে মিল্লা কাজ কইরা ভালোই চলছিল ওরা।

কিন্তু কপালে সইল না সেই সুখ। কাজে যাওয়ার সময় বাসচাপায় মারা গেল ছেলের বউ। মইরাও শান্তি পায় নাই। ময়নাতদন্ত নিয়া সিদ্ধান্তহীনতার কারণে লাশ নিয়া ঘুরতেছি নানা জায়গায়। আসলে মরার পরেও শান্তি নাই গরিবের।’

শনিবার (২৫ মে) দুপুরের দিকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানা চত্বরের গোলঘরে বসে বার্তা২৪.কমের কাছে এমনটাই বলছিলেন কর্মী পরিবহন বাসের চাপায় নিহত রিমা রাণী দাসের শাশুড়ি কাজলী দাস।

নিহতের শ্বশুর খগেন চন্দ্র দাস জানান, রাজশাহীর পুটিয়া উপজেলায় তাদের বাড়ি। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া দেওয়ানপাড়া এলাকার দেওয়ান শাহ আলমের বাড়িতে ভাড়া থাকে তার ছেলে উজ্জ্বল দাস। পেশায় নরসুন্দর উজ্জ্বল পারিবারিক অভাবের তাড়নায় দেড় বছর আগে স্ত্রী রিমাকে নিয়ে আসেন ওই ভাড়া বাড়িতে।

ঢাকার ধামরাই উপজেলার কালামপুর এলাকার এম এ এইচ স্পিনিং মিলস লিমিটেডে চাকরি নেন রিমা। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার (২৪ মে) অফিসের গাড়িতে করে কাজে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। পথে বাসচাপায় পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বিনা ময়নাতদন্তে ওই লাশ নিয়ে ভাড়া বাড়িতে আসেন স্বামী উজ্জ্বল। এতে বাঁধে বিপত্তি।

রিমার বাবার বাড়ির দাবি- লাশের ময়নাতদন্ত করতে হবে। ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশের শেষকৃত্য করা যাবে না।

কিন্তু রিমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন লাশের ময়নাতদন্ত করাতে চান না। এ নিয়ে চলে সিদ্ধান্তহীনতা। সবশেষ লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত এভাবেই অ্যাম্বুলেন্সে করে থানায় পড়ে আছে লাশটি।

রিমার দেবর সুজন দাস জানান, মারা যাওয়ার খবর পেয়ে রিমার অফিস থেকে একজন ম্যানেজার এসে হাসপাতালে ১০ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। নিহতের শেষকৃত্য শেষে যোগাযোগ করতে বলেছে। এখন লাশ নিয়ে বিপাকে থাকায় ওই অফিসে আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।

রিমার স্বামী উজ্জ্বল দাস জানান, ৬ বছরের বিথী ও ১৪ মাস বয়সী মেয়ে রাখীকে নিয়ে তাদের সংসার। এরই মধ্যে বাসচাপায় মারা গেল রিমা। স্ত্রীর লাশ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে দিশেহারা তিনি।

সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, লাশের ময়নাতদন্ত নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এমন ভোগান্তি হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রিমার ভাই ও তার কাকা আসলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রিমার পরিবারের সদস্যরা আইনের আশ্রয় নিলে প্রয়োজন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ওসি আরও জানান, কর্মী পরিবহন ওই বাসের চালক সাইফুল ইসলামকে (২৮) শুক্রবার দুপুরে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ধামরাই উপজেলার কামারপাড়া এলাকার আজাহার আলীর ছেলে সাইফুল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুলের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি জানা গেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর