অস্তিত্ব সংকটে তেঁতুলিয়ার টুপি পল্লী

পঞ্চগড়, দেশের খবর

মোহাম্মদ রনি মিয়াজী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, পঞ্চগড়, বার্তা২৪.কম | 2023-08-12 12:47:14

ঈদের বাকি আর মাত্র ক’দিন। এরই মধ্যে ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে টুপির চাহিদা বেড়েছে। ক্রেতারা পছন্দের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কিনছেন টুপি। কিন্তু পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার টুপি পল্লীর চিত্র একটু ভিন্ন। সেখানের কারখানায় নেই কোনো কাজের চাপ। অধিকাংশ কারখানার দরজায় তালা ঝুলছে। ফলে বেকার সময় পার করছেন উদ্যোক্তারা।

জানা গেছে, চাহিদা থাকায় কয়েক বছর আগে তেঁতুলিয়া উপজেলার মাথাফাটা গ্রামে টুপি শিল্পের বিপ্লব ঘটে। উদ্যোক্তারা কারখানা স্থাপন করায় বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। পরে গ্রামটি টুপি পল্লী নামেই পরিচিতি পায়। আব্দুল হান্নান নামে এক মাদরাসা শিক্ষক প্রথম টুপির কারখানা গড়ে তোলেন। তাকে দেখে আরও বেশ কয়েকজন কারখানা গড়ে তোলেন। মাথাফাটা গ্রামে বর্তমানে ৭টি কারখানা রয়েছে। যার অধিকাংশই বন্ধ থাকে। ফলে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে এই অঞ্চলের টুপি পল্লী।

আরও জানা গেছে, মাথাফাটা ওই পল্লীতে বিভিন্ন ডিজাইনের টুপি তৈরি করা হয়। এখানের টুপির বিশেষ করে ঢাকা, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চট্টগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুরে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে শ্রমিক সংকট ও পুঁজির অভাবে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না।

কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি টুপি ৬০-২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। একটি টুপি তৈরি করতে সময় লাগে ৩০ মিনিট। একজন শ্রমিক দিনে ২০-২৫টি টুপি তৈরি করতে পারেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, টুপি পল্লীতে মোট ৭টি কারখানার মধ্যে ৪টি বন্ধ আছে। যে ৩টি চালু আছে সেগুলোও ধুঁকে ধুঁকে চলছে। মূলত শ্রমিক ও পুঁজি সংকটের কারণে সবাই ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

আল জিহাদ টুপি ক্যাপ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক জুলহাস উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে জানান, কাঁচামাল ঢাকা থেকে নিয়ে আসতে হয়। বাজারে এখানের উৎপাদিত টুপির চাহিদা থাকলেও শ্রমিক সংকট ও পুঁজির অভাবে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পারছেন না তারা।

ইকরা ক্যাপ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক হারুন-অর-রশিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় আমরা অনেক সমস্যায় পড়েছি। অনেক কারখানা লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার সহযোগিতা না করলে কারখানা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না।’

কারখানার নারী শ্রমিক আনোয়ারা বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা কারখানায় সারাদিন কাজ করে অনেক কম মজুরি পাই। এর চেয়ে পাথর ও চা বাগানে কাজ করলে বেশি মজুরি পাওয়া যায়। ফলে অনেকে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।’

তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী আনিসুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, সরকার গুরুত্ব দিলে টুপি শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বার্তা২৪.কমকে জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় তেঁতুলিয়ার টুপির অনেক সুনাম রয়েছে। তাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর