প্রধানমন্ত্রী চাইলেই স্বামী হত্যার বিচার পাব: নিহত একরামুলের স্ত্রী

কক্সবাজার, দেশের খবর

নূরুল হক, উপজেলা করেসপেন্ডেন্ট, টেকনাফ (কক্সবাজার), বার্তা ২৪.কম | 2023-08-15 10:18:56

স্বামী হত্যার বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে চেয়ে আছেন টেকনাফের নিহত কাউন্সিলর একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা বেগম। তিনি বলেন, ‘এটা স্বাধীন বাংলাদেশ, এদেশে আমি কি স্বামী হত্যার বিচার পাব না? কেন আমার স্বামীকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে? আমি এখনও আশা রাখি, এই মাটিতে আমার স্বামী হত্যার বিচার হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে আমি স্বামী হত্যার বিচার পাব।’

শনিবার (২৫ মে) বার্তা২৪.কম-এর সাথে আলোচনায় এসব কথা বলেন আয়েশা বেগম।

জানা গেছে, একরামুল হক টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালি পাড়ার আবদুস সাত্তারের ছেলে এবং পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলার ও স্থানীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। গত বছর ২৬ মে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন একরাম। র‌্যাবেব দাবি, তিনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তবে নিহতের স্বজনদের দাবি পরিকল্পিতভাবে তাকে 'হত্যা' করা হয়েছে।

আয়েশা বেগম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমার স্বামী কোনোদিনও মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। এক বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ আমাদের খবর নেয় নি। কিন্তু ঘটনার পর অনেকেই অনেক আশা দিয়েছিলেন। গত রমজানে দুই জন মন্ত্রী আমাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু এখনও আমি ডাক পায়নি। ওই সময় মামলা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওপর থেকে নির্দেশ আসে কিছুই করা যাবে না, বিষয়টি সরকার দেখছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামীকে হত্যা করা হলেও সরকার চুপ থাকলো, যা মানা যায় না। অন্তত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এটা মানা যায় না। কারণ আমার স্বামীতো আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা ছিলেন। সবাই জানে আমার স্বামী জনগণের কল্যাণে কাজ করেছিলেন। কিন্তু দলের পক্ষ থেকেই আমাদের কোনো খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি।’

আয়েশা বেগম বলেন, ‘স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমি জানতে চাই, কেন আমার স্বামী খুন হলো? কেউ আমার দুই মেয়ে তাহিয়া হক ও নাহিয়ান হকের খবর রাখেনি। জানিনা এটি কেমন সমাজ! এখন আমাদের কষ্টের জীবন। এদিকে স্বামী হত্যার বিচার নিয়ে সন্দেহ অন্যদিকে মেয়েদের কান্না।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমার স্বামীও তার দলের লোক ছিলেন। তবুও দলের কেউ আমাদের খোঁজ নেননি। মেয়েরা সেহরি খওয়ার সময় বাবা’কে খুঁজে কান্না করে। তাদের প্রশ্ন- বাবাতো কোনোদিন কারও খারাপ করেনি। তবুও কেন বাবাকে খুন করা হয়েছে? তাদের এমন প্রশ্নে নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয়।’

অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ঘটনা ঘটার আগেই টেলিভিশনে আমার স্বামীর মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয়। এতেই বুঝা যায় হত্যাকারীরা আগে থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছিল। আমি একবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। কারণ তিনিও একজন নারী। তাই আমার কষ্টগুলো তিনিই বুঝবেন। প্রধানমন্ত্রী চাইলেই আমি স্বামী হত্যার বিচার পাব।’

নিহত একরামুলের স্ত্রী বলেন, ‘ঘটনার পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এসেছিলেন। কিন্তু এরপর তিনি আর কোনো খোঁজ নেননি। মাঝে মধ্যে আমার স্বামী নম্বরটি খোলা পাওয়া যায়। কিছুদিন আগেও ওই নাম্বারে কল দিয়েছিলাম। কে যেন রিসিভ করেছিল, কিন্তু কথা বলেনি। তবে আমি কান্না করে বলেছিলাম, আমার স্বামী তো নির্দোষ ছিল, কেন তাকে এইভাবে হত্যা করা হয়েছে? যেখানে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয় সেখানে বেশ কিছুদিন আগে একজন একটি সাদা চশমা কুড়িয়ে পেয়েছিলেন। সেটি বাড়ি এসে একজন দিয়ে গেছে। এসব এখন শুধুই কষ্টের স্মৃতি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, একরামুল হত্যায় যে অডিওটি ফাঁস হয়েছে সেটি আনার ব্যবস্থা করছি। একজন ম্যাজিস্ট্রেট বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।

প্রসঙ্গত, গত বছর ২৬ মে নিহত হওয়ার পর কাউন্সিলার একরামুল হকের স্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে চারটি অডিও প্রকাশ করেন, যাতে শোনা যাচ্ছে তার মেয়ের সাথে একরামুল হকের কথোপকথন। এক পর্যায়ে গুলি ও গোঙানির শব্দও শোনা যায়। এই অডিওটি প্রকাশের পর থেকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর