ঈদকে ঘিরে বেড়েছে রং বেরংয়ের ইয়াবা পাচার

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,কক্সবাজার | 2023-09-01 13:26:02

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বেড়েছে সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে ইয়াবা পাচার। ঈদে ইয়াবা নিয়মের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। গত এক সপ্তাহে পাচারের সময় বড় কয়েকটি চালান উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুত্রে জানা যায়, গত ১ সপ্তাহে অন্তত দুই লাখেরও বেশি ইয়াবাসহ আসামি আটক করা হয়েছে। যার বেশিরভাগই যাচ্ছিল নারায়নগঞ্জ, ঢাকা, যশোরসহ আরও অনেক এলাকায়। আগের সপ্তাহে উদ্ধার হওয়া ইয়াবার পরিমাণ তার অর্ধেক।  উদ্ধারকৃত ইয়াবার মধ্যে ৯৪০ পিস সাদা রংয়ের ইয়াবাও পাওয়া যায়। যা দেখে রীতিমত চমকে উঠেন মাদকদ্রব্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। ঈদকে ঘিরেই এসব চালান নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে আটকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়া ইয়াবার মধ্যে, রোববার (২৬ মে) ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফে ইয়াবাসহ আব্দুল আমিন নামে এক পাচারকারীকে আটক করেছে র‌্যাব।

এ সময় তার কাছ থেকে ১ লাখ ইয়াবা ও ৩ লাখ নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। টেকনাফের হাতিরঘোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব ইয়াবাসহ তাকে আটক করা হয়। আটক আমিন কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের ফজলুল হকের ছেলে।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে পালংখালী থেকে ১৯ হাজার ৭০০ ইয়াবাসহ দুইজনকে আটক করে র‌্যাব। এসময় একটি ট্রাকও জব্দ করা হয়। গত ২০ মে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার লিংরোড থেকে ৫ হাজার ইয়াবাসহ দুইজনকে আটক করা হয়। এ ইয়াবাগুলো ঈদ উপলক্ষে তারা খুচরা বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিল বলে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।

এছাড়াও গত ২৩ মে বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার মাদকদ্রব্য অধিদফতরে গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে ৯৪০ সাদা রংয়ের ইয়াবাসহ টেকনাফের পুরান পল্লানপাড়ার মৃত সৈয়দ উল্লাহর স্ত্রী জাহেদা বেগম (৪৭) কে আটক করে।

২৪ মে রাত ১১ টার দিকে শেখ আজিজুল মার্কেটের সামনে থেকে এক হাজার ইয়াবাসহ মো. জুবাইর (২০) নামে এক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। একই দিন গফুর মার্কেটের সামনে থেকে ১ হাজার ইয়াবাসহ ছৈয়দুল ইসলাম (২০) নামে একজনকে আটক করে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের গোয়েন্দারা।

এদিকে ঈদের আগে অভিযানে হলুদ ও সাদা রংয়ের ইয়াবা উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যা দেখে তারা নিজেরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। সম্প্রতি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় উদ্ধার ৮০০ ইয়াবা রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়। র‌্যাব- মাদকদ্রব্য অধিদফতরের পাশাপাশি বিজিবি-পুলিশের হাতেও আটক হয়েছে কয়েকজন ইয়াবা পাচারকারী। বিভিন্নভাবে ঈদের আগে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাচারকারীরা।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইন কমান্ডার আজিম আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিনই আমাদের টিমের হাতে আটক হচ্ছে পাচারকারী বা ব্যবসায়ী। যাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে লাখ লাখ পিস ইয়াবা।

তিনি আরও বলেন, অভিযানে আটক হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ায় র‌্যাব টহল ও অভিযান জোরদার করেছে। এ অভিযান অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

কক্সবাজার মাদক দ্রব্য অধিদফতরের সহকারি পরিচালক সোমেন মন্ডল বার্তা ২৪.কমকে বলেন, শুধু ইয়াবা নয় এ সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার হচ্ছে গাঁজাও। সম্প্রতি আমাদের গোয়েন্দা কয়েক কেজি গাঁজাসহ দুই নারীকে আটক করে। ঈদকে ঘিরে মাদকের পাচার বেড়ে গেছে। আমরা অভিযান জোরদার করেছি।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, চেকপোস্টে তল্লাশির সময় আটক হচ্ছেন ইয়াবা পাচারাকারীরা। ঈদকে ঘিরে হয়তো একটু বেশি হচ্ছে পাচার। তাই বিজিবি সতর্ক রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণের পরও ইয়াবার পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না। আইনশঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কয়েকটি বড় বড় চালান আটক হয়। কিন্তু কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবা পাচার। বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবা কারাবারি নিহতের সংখ্যাও কম নয়। এবার ঈদ মিশনে নেমেছেন আত্মসমর্পণ না করা ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এমনটাই মত বিশিষ্টজনদের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর