ডাক্তার দেখানোর জন্য হাতে টিকিট নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে শতাধিক রোগী। চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। সকাল ৮টায় কর্মে আসা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আজিজুল হক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভর্তি রোগীর পাশাপাশি তিনি জরুরি বিভাগেরও চিকিৎসা দিচ্ছেন।
রোগীদের ডাকাডাকিতে এ চিকিৎসক যখন ভর্তি রোগীদের দেখতে যান, তখন জরুরি বিভাগের রোগী দেখছেন একজন ওয়ার্ড বয় ও সিনিয়র স্টাফ নার্স। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
সোমবার (২৭ মে) সকাল ১০টা থেকে প্রায় আধাঘণ্টা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে অবস্থান করে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এলাকার জালাল উদ্দীন নামে এক রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন বিনোদপুর ইউনিয়নের মো.বিশু। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রায় ঘণ্টাখানেক অসুস্থ রোগীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তার পরও তিনি এমবিবিএস চিকিৎসক দেখাতে পারেননি। পরে জালাল উদ্দীনের চিকিৎসা দিয়েছেন হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় আশুতোষ ঘোষ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স আবদুস সালাম।
মো.বিশুর মতো এমন অভিযোগ করেছেন সীমান্তবর্তী এলাকার আজমতপুর গ্রামের একরামুল হক। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসেন। প্রায় পৌনে ১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে যখন ওয়ার্ড বয় চিকিৎসা করতে যান, তখন তিনি রাগ করেই চিকিৎসা না নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন।
একই অভিযোগ চিকিৎসা নিতে আসা অসংখ্য রোগীর।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২১ জনের। তাদের মধ্যে প্রেশনে সদরে আছেন দু’জন, চারজন কনসালটেন্ড। ছুটি ছাড়াই প্রায় একমাস ধরে আত্মগোপনে আছেন হাসপাতালের টিএইচ ডা.জাহাঙ্গীর হোসেন। ফলে মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক দিয়ে কোন রকমে চলছে প্রায় ৫ লাখ মানুষের একমাত্র ভরসার হাসপাতালটি। আর বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে।
জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আজিজুল হক বলেন, ‘সকাল ৮টায় ডিউটি শুরু করে সব দিক সামাল দিতে হচ্ছে। আমাকেই আরএমও, টিএইচও এবং জরুরি বিভাগসহ ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। তার পরও যথাসাধ্য রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’
তবে ওয়ার্ড বয় দ্বারা চিকিৎসার কথা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ফেরদৌস কামাল আর্তাতুত বলেন, ‘শিবগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসকরা রোগীদের প্রতি সব সময় আন্তরিক। চিকিৎসক সঙ্কট থাকায় বাড়তি ডিউটি করতে হচ্ছে তাদের। তার পরও ওয়ার্ড বয় দিয়ে চিকিৎসা করানোর কথা নয়।’
তার দাবি- আগামী এক মাসের মধ্যে চিকিৎসক সঙ্কটের সমাধান করা হবে।