আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৭ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়লেও বঞ্চিত হচ্ছেন রাজবাড়ীর ৩০ হাজার গ্রাহক। আর নতুন নোট না পেয়ে ক্ষুব্ধ তারা।
জানা গেছে, কালোবাজারে নতুন টাকা পাওয়া গেলেও স্থানীয় জনতা, কৃষি ও অগ্রণী ব্যাংকে নতুন টাকা মিলছে না। তবে সোনালী ব্যাংক বালিয়াকান্দি শাখা কর্তৃপক্ষ কিছু নতুন নোট গ্রাহকের দিয়েছেন।
গ্রাহকদের দাবি, সারাবছর ব্যাংকে লেনদেন করে যদি বিশেষ দিনে নতুন টাকা না পায় তাহলে একটু খারাপই লাগে। ব্যাংক কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে নতুন টাকাগুলো ভাগ করে নেন। আর ব্যাংক কর্মকর্তাদের দাবি, তারা না পেলে গ্রাহকদের কিভাবে দেবেন? তবে গ্রাহকদের অভিযোগের যৌক্তিকতা আছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন টাকা বাজারে ছাড়লেও তা তাদের শাখাতে এসে পৌঁছায় না।
কেন পৌঁছায় না জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যাংক কর্মকতা বার্তা২৪.কমকে জানান, যখন বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে নতুন টাকা ছাড়ে তখনই সেগুলো কালোবাজারে চলে যায়। কারণ ব্যাংকে টাকা না পাওয়া গেলেও ফুটপাতে হকারদের কাছে ঠিকই নতুন টাকা পাওয়া যায়। তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ এই কাজে অসাধু ব্যবসায়ীরা জড়িত।
কৃষি ব্যাংক বালিয়াকান্দি শাখা ব্যবস্থাপক ওবায়দুল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার শাখাতে নিয়মিত লেনদেন করেন প্রায় ৪ হাজার গ্রাহক। অথচ আমি কোনোবারই তাদের নতুন টাকা দিতে পারি না। কারণ এখানে নতুন টাকা আসে না। তবে বিশেষ অনুরোধে এবার সোনালী ব্যাংক বালিয়াকান্দি শাখা আমাদের কিছু নতুন নোট দিয়েছে।’
অগ্রণী ব্যাংক নলিয়া জামালপুর শাখা ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা ফরিদপুর মেইন ব্রাঞ্চে টাকা সাপ্লাই দেয়। তারা আমাদেরকে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা গ্রাহকদেরকে দিতে পারছি না। আমার শাখাতে প্রায় ১২ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। তার মধ্যে ৫-৬ হাজার গ্রাহক নিয়মিত লেনদেন করেন।’
কৃষি ব্যাংক ফরিদপুর কর্পোরেট শাখার সহকারি মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মীর্জা জাহিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক আমাদেরকে যে নতুন টাকা দেয় সেটা দিয়ে কর্পোরেটদের চাহিদাই মেটে না। তাহলে অন্য গ্রাহকদের কিভাবে দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় বন্ধু-স্বজনরা নতুন টাকার আবদার করে। কিন্তু দিতে না পারায় লজ্জায় তাদের সামনে যেতে পারি না। অনেক সময় হকারদের কাছ থেকে বেশি দামে নতুন নোট কিনে কয়েকজনকে দিই।’
সোনালী ব্যাংক বালিয়াকান্দি শাখা ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমার শাখাতে প্রায় ১৪ হাজার গ্রাহক রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে চাহিদার তুলনায় নতুন টাকার নোট পেয়েছি খুবই কম। তারপরও সবাইকে অল্প করে নতুন নোট দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মফস্বলে ১০-২০ টাকার নতুন নোটের চাহিদা বেশি। কিন্তু আমাদের দেওয়া হয় ১০০ টাকার নোট, যা গ্রাহকরা নিতে চান না।’
সোনালী ব্যাংক থেকে নতুন টাকার নোট পাওয়া গ্রাহক জিয়াউর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এবার আমি ১০ টাকার একটি নতুন বান্ডিল নিতে পেরেছি। ফলে খুবই ভালো লাগছে। পরিবারে ছোটদের সেলামি হিসাবে টাকাগুলো বিতরণ করবো।’
তবে নতুন টাকা না পাওয়ায় গ্রাহক রিজু ক্ষোভ প্রকাশ করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এখানের ব্যাংকগুলোতে নাকি নতুন টাকা আসে না। এটা যদি সত্য হয় তাহলে আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করবো মফস্বলের ব্যাংকগুলোতে যেন ঈদের আগে নতুন টাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়।’