নাটোরের বড়াল নদীতে বালু উত্তোলন, ভাঙনের শঙ্কা

নাটোর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর | 2023-08-11 04:50:53

নাটোরের লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বড়াল নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মচ্ছব। খোদ বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন ইউএনও পার্ক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত পাঁচ স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

এছাড়া বাঁশবাড়িয়া এলাকায় আরও একটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক। ফলে তাদের প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না কেউ।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের কেউ কেউ স্থানীয় সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম বকুলের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়েছে। এভাবে স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে নির্বিঘ্নে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলনের কারণে আবাদি জমি ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার ক্ষতি হচ্ছে। নদীভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে। নদী অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও তা পরোয়া করছে না বালু উত্তোলনকারী এই প্রভাবশালীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতরা হলেন- সরকারি দলের সমর্থক ভুলু, মানিক, আলম, রানা, পাইলট, মহন ও আফ্রিদি। এদের মধ্যে আফ্রিদি স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের নিকটাত্মীয় হিসেবে পরিচিত হওয়ায় কেউ বাধা দিতে সাহস পান না।

তারা জানান, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ইউএনও পার্ক সংলগ্ন রেলওয়ে ব্রিজসহ দুইটি ও জয়ন্তীপুরের ব্রিজ হুমকির মুখে পড়েছে। অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর দু’পাড়ের আবাদি জমি, বাগান ও বসতবাড়ি ভেঙে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাঁশবাড়িয়া, ধুপইল, শোভ, চিমনাপুর ও জয়ন্তীপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ। বালু উত্তোলনকারীরা সরকারি দলের লোক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ করার সাহস করছেন না কেউ। তবে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে মৌখিকভাবে একাধিকবার জানানো হয়েছে।

তবুও দীর্ঘদিন ধরে নদীতে প্রকাশ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

স্থানীয় সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম বকুলের নিকটাত্মীয় পরিচয়দানকারী আফ্রিদির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তারা কার কাছে অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলার এক সাংবাদিকের সাথে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে কথা হয়েছে। এছাড়া বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে।

বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মবর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা লালপুর ইউএনও উম্মে বানীন দ্যুতি বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানি না। সরেজমিনে গিয়ে প্রমাণ মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম বকুল বলেন, বালু উত্তোলনের সাথে আমার কোনো আত্মীয় জড়িত থাকার বিষয়টি সঠিক নয়। তবে দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে। যদি কারো বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানার পর ইউএনওকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর